ডিসফাংশনাল ইউটারাইন ব্লিডিং কী? কেন হয়?

প্রতি মাসে যদি নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে রক্ত ভাঙে তাহলে তাকে ডিসফাংশনাল ইউটারাইন ব্লিডিং বলা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৮৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. নাঈমা শারমিন হক। বর্তমানে তিনি শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসূতি ও ধাত্রী বিদ্যা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ডিসফাংশনাল ইউটারাইন ব্লিডিংয়ের মানে কী? এটি কেন হয়?
উত্তর : ডিসফাংশনাল ইউটারাইন ব্লিডিং হলো কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই যদি অতিরিক্ত রক্ত ভাঙে প্রতি মাসে বা অনিয়মিতভাবে, একেই আমরা বলি ডিসফাংশনাল ইউটারাইন ব্লিডিং।
প্রশ্ন : কোনো কারণ ছাড়াই যে রক্ত ভাঙছে, এর কারণ কী?
উত্তর : বিভিন্নভাবে বোঝা যায়। যেমন, একজন নারী যেমন জানে তার পিরিয়ড কয়দিন থাকে। ঋতুস্রাব কতদিন চলছে বা কতদিন পর পর হয়, তার প্রতিদিন কয়টা করে প্যাড পরিবর্তন করতে হয়। রোগী এসে বলবে, আপা আমার মনে হচ্ছে আমার বেশি রক্তপাত হচ্ছে। আগে দুদিন বা তিনদিন থাকত, এখন পাঁচদিন থেকে সাতদিন থাকে। আগে আমার দুটো তিনটা প্যাড পরিবর্তন করতে হতো, এখন আমার অনেক লাগে। এগুলো রোগীদের অভিযোগ থাকে। পাশাপাশি রোগী বলে যে আমার এখন কাহিল লাগে, দুর্বল লাগে, শ্বাসকষ্ট হয়, বেশি রক্তপাত হচ্ছে। তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় মেডিসিন রোগীদের কাছে ঘুরে আমাদের কাছে আসে। কারণ, এই রক্ত যাওয়াটা তাদের কাছে কোনো সমস্যা মনে হয় না। তাদের কাছে মনে হয় আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমার বুক ধরফর করছে। এই জিনিসগুলো তাদের কাছে অনেক বেশি সমস্যার মনে হয়। আমাদের সমাজ অনুযায়ী এই সমস্যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গৃহবধূদের হয়। তারা এমন একটি সময় চিকিৎসকের কাছে যায় যখন তারা ঘরের কাজ করতে পারে না। যখন তার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখনই সে বুঝতে পারে কোনো সমস্যা হচ্ছে। তবে প্রতি মাসে ঋতুস্রাব তার জন্য নিয়মিত একটি বিষয়। পরে পরীক্ষা করে দেখা যায় আসলে তার সমস্যা খুবই কম। তার জরায়ুতে কোনো টিউমার বা সংক্রমণের লক্ষণ কিছুই নেই। তার কোনো থাইরয়েডের সমস্যা নেই বা কোয়াগুলেশন নেই। এই ধরনের সমস্যা হওয়ার পর তার রক্তপাত হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে পরে দেখা যায় যে, এসব রোগীরা গাইনোকোলোজিস্টের কাছে আসে বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা আমাদের কাছে রেফার করে। শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে আসার পর আমরা দেখি এটি আসলে ডিসফাংশনাল ইউটারাইন ব্লিডিং। এই শব্দের অর্থ হলো, কোনো কারণ ছাড়াই মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া। এটা হতে পারে মাসে মাসে। হতে পারে অনিয়মিতভাবে।
প্রশ্ন : কী কী ধরনের সমস্যা হয়?
উত্তর : প্রথম হলো মানসিক সমস্যা। মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে রোগী যায়। এটি তার ডিসফাংশনাল ইউটারাইন ব্লিডিংকে আরো বাড়িয়ে দেয়। নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে না পেলেও মানসিক চাপ এখানে একটি বড় কারণ হিসেবে কাজ করে। আমরা এই রোগীদের সাধারণত পরামর্শ দেই আপনি আপনার ঋতুস্রাবের ক্যালেন্ডারটা মেনে চলুন। এমনও রোগী আছে তার কাছে হয়তো মনে হচ্ছে বেশি রক্ত যাচ্ছে। তবে আমাদের কাছে যখন আসছে, আমরা হয়তো পাই না। তখন আমরা বলি আপনার মিনসট্রুয়াল ক্যালেন্ডারটা মেনে চলেন। প্রতি মাসে কবে শুরু হচ্ছে, কবে শেষ হচ্ছে। এটা যখন আমাদের কাছে নিয়ে আসে, তখন আমরা দেখে বুঝি তার আগে একরকম ছিল, এখন হয়তো বেশি যাচ্ছে। এই জন্য ছোট্ট একটি পরীক্ষায় যাই। এখানে রোগীকে সামান্য একটু অজ্ঞান করে, ইউট্রাসের ভেতরের যে লেয়ার মাসিকের সময় ঝড়ে পড়ে, সেই অংশকে আমরা চেঁছে নিয়ে আসি। এনে একে হিসটোপ্যাথোলজি করি। মাইক্রোস্কোপের নিচে সরাসরি দেখা যায়। দেখা হয়, এখানে এমন কোনো রোগ আছে কি না, যেটা আল্ট্রাসাউন্ডে ধরা পড়ছে না। এটা একটা করতে পারি। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের বিষয়টা থাকে আমরা রোগীকে নিশ্চিত করি যে ভয় পাওয়া কোনো কারণ নেই। এটা ঠিক হয়ে যাবে। আপনাকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা মেডিসিন দেব। মেডিসিন যদি কাজ না করে সেক্ষেত্রে আমরা পরবর্তী পর্যায়ে যেতে পারি।