গর্ভকালীন পরিচর্যা কীভাবে করবেন

গর্ভাবস্থায় অ্যান্টিনেটাল চেকআপ বা পরিচর্যা অনেক জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৪৪০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক কহিনূর খান। বর্তমানে তিনি গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ গণবিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি ও অবস বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : গর্ভকালীন পরিচর্যা বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : গর্ভকালীন পরিচর্যা হলো একজন নারী গর্ভধারণের পর থেকে পুরো সন্তান ধারণের সময়টাই। অর্থাৎ যখন নারী নিশ্চিত হলো সে সন্তানসম্ভবা, সেদিন থেকে একেবারে সন্তান প্রসব পর্যন্তই গর্ভকালীন পরিচর্যা।
প্রশ্ন : অ্যান্টিনেটাল চেকআপ কি সব মায়ের ক্ষেত্রে করা হয়?
উত্তর : সরকার এটা ব্যবস্থা করে নিয়েছে যে প্রতিটি জেলায় সরকারি মেডিকেল কলেজ হচ্ছে, প্রতিটি জেলায় জেলায় ক্লিনিক হচ্ছে এবং উপজেলা পর্যায়ে ক্লিনিক হচ্ছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হচ্ছে এবং দেখা যায় বেসরকারি পর্যায়েও অনেক ক্লিনিক ও হাসপাতাল হচ্ছে। সরকার চায়, প্রায় প্রতিটি নারী অ্যান্টিনেটাল চেকআপে থাকবে। রোগ নিয়ন্ত্রণ হবে, রোগ নির্ণয় হবে এবং তাদের পরিচর্যা হবে এবং কোনো রোগীই যেন মারা না যায়। এর উদ্দেশ্য হলো মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে দেওয়া। একে শূন্যতে নামিয়ে নেওয়ার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে আমরা অ্যান্টিনেটাল চেকআপ করছি।
প্রশ্ন : কাদের ক্ষেত্রে আমরা এটিকে বেশি গুরুত্ব দেব?
উত্তর : আমরা কাদের বেশি গুরুত্ব দিই? যাদের প্রথম বাচ্চা হচ্ছে, অনেক দিন পর বাচ্চা হচ্ছে, অল্প বয়সে বাচ্চা হয়েছে এবং অধিক বয়সে বাচ্চা হচ্ছে। যেসব মা গর্ভবতী অবস্থায় দেখা যায় রক্তচাপে ভুগছে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ, এরপর বঙ্কিয়াল অ্যাজমা এসব রোগ যাদের আছে, তাদের প্রতি আমরা বিশেষ নজর রাখি। এসব ক্ষেত্রে আমরা বলি যে যখনই ধরা পড়বে সে গর্ভবতী, তখনই তিন মাসের মধ্যে তার একটা চেকআপের দরকার। এ সময়ে যখন সে চেকআপে আসে, তখনই আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। রক্ত প্রস্রাব থেকে শুরু করে আলট্রাসনোগ্রাফি করি। আলট্রাসনোগ্রাফি এ সময়ে করার উদ্দেশ্য হলো যে জেনে নেওয়া সে নিশ্চিত গর্ভবতী। এর পর গর্ভের সময়টা বোঝা। ডেলিভারির সম্ভাব্য সময়টাও আমরা বুঝে নিই আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে।
আর যদি তিন মাসের সময় একজন নারী এলো, তখন পরীক্ষা করে কোনো সমস্যা আছে কি না, সেটিও আমরা বুঝতে পারি। প্রথম ট্রাইমেস্টারে আমরা রক্ত থেকে শুরু করে হিমোগ্লোবিন, ব্লাড গ্রুপিং, ব্লাড সুগার, লিভার কার্যক্রম ও কিডনি কার্যক্রম দেখে নিই। কারণ, যদি মা নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা নিতে হবে।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মায়েদের ক্ষেত্রে আমরা খুব দ্রুত এই চেকআপ করাই। যেমন ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত কাউকে কাউকে করাই। আবার দেখা যায়, ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি মাসে করাই। যদি কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, যেমন খুব বেশি মাথাব্যথা হচ্ছে, তখন যখন পারে সে তখনই আসবে।
তারা চেকআপে আসবে ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত এবং ডেলিভারের আগে প্রতি সপ্তাহে। এভাবে আমরা অ্যান্টিনেটাল চেকআপ করাই। প্রতি মাসেই আমরা হিমোগ্লোবিন ও প্রস্রাবটা দেখে নিই। আর শেষের দিকে যে ওজন কী রকম বাড়ল। আমরা সব সময় পালস, রক্তচাপ, ওজন এগুলো দেখি। রক্তচাপ ও ওজনের ওপর বেশি জোর দিই। দেখা গেল, রক্তচাপ হয়তো বেড়ে গেছে। তাদের হয়তো দেখা গেল বিষয়টি বংশগত, পারিবারিকভাবে রয়েছে। আর যাদের রক্তচাপ বাড়ছে না, সঙ্গে প্রস্রাবে অ্যালবুমিন রয়েছে, তাদের আমরা বলি প্রি-একলামশিয়া। তাদের বিশেষ করে থার্ড ট্রাইমিস্টারে এটা হয়। তবে এটি ঘটে বিশেষ করে ২০ সপ্তাহের মধ্যে।
জেসটেশনাল ডায়াবেটিস হতে পারে অথবা এটা ডায়াবেটিস মেলাইটাস হতে পারে, তাদের বেলায়ও রক্তের সুগারটা দেখে নিতে হবে। প্রস্রবের পরও তাদের চেকআপে রাখতে হবে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বা ঝুঁকিহীন মা দুই দলের জন্যই এটা করতে হবে। যদি জেসটেশনাল উচ্চ রক্তচাপ হয়, পরে দেখা যায় এটা স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। জেসটেশনাল ডায়াবেটিস হলেও এটা স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। যদি এটা থেকে যায় তবে সে ক্ষেত্রে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।