কাঁধে ব্যথার কারণগুলো কী?

কাঁধে ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪১০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এ এইচ এম রেজাউল হক। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : কাঁধে ব্যথার পেছনের কারণগুলো কী?
উত্তর : কাঁধের ব্যথা একটি অতি সাধারণ সমস্যা। আমাদের দেশে এর প্রধান কারণ সারভাইক্যাল স্পোনডোলাইসিস। দ্বিতীয় হলো, ফ্রোজেন শোল্ডার। তৃতীয়, যদি কোনো আঘাত পাওয়ার কারণে হয়।
আরো অনেক কারণ রয়েছে, যেমন—ইমপেন সিনড্রোম অথবা অন্য কোনো আঘাত। লিগামেন্ট আহত হওয়া। বাইসেটেনডিনাইটিস। এই কারণে হয়।
প্রশ্ন : সারভাইক্যাল স্পোনডিওলাইটিস কী ও কেন হয়?
উত্তর : আমাদের ঘাড়ে যে হাড়গুলো আছে, আমাদের ঘাড়টা সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া করে। এতে করে এখানে একটি ক্ষয় হয়। ক্ষয় হয়ে এখানে মাইক্রোফ্র্যাকচার তৈরি হয়। আর্থ্রাইটিস তৈরি হয়। একেই আমরা বলি সারভাইক্যাল স্পোনডোলাইটিস। সে আর্থ্রাইটিসের জন্য এর মধ্য দিয়ে স্নায়ু যায়, সেটাতে চাপ পড়ে, স্নায়ুর ব্যথা হয়। এই ব্যথা সাধারণ কাঁধ থেকে শুরু করে হাত পর্যন্ত অথবা হাতের আঙুল পর্যন্ত চলে যায়। এক ধরনের ঝিনঝিন ভাব তৈরি হয়। এ ধরনের একটা ব্যথা হয়।
প্রশ্ন : কাদের হতে পারে?
উত্তর : সাধারণত যারা ডেস্কের কাজ বেশি করে, তাদের বেশি হয়।
প্রশ্ন : ফ্রোজেন শোল্ডার সম্পর্কে কিছু বলুন?
উত্তর : যখন কাঁধের গাঁট শক্ত হয়ে যায়, সে হাতটা নাড়াতে পারে না, তখন আমরা তাকে বলি ফ্রোজেন শোল্ডার। হাত সে নাড়াতে পারছে না। মাথার ওপর হাত ওঠাতে পারছে না। পিঠ চুলকাতে পারছে না। যখন গাঁট শক্ত হয়ে যায়, তখন আমরা একে বলি ফ্রোজেন শোল্ডার। তবে ফ্রোজেন শোল্ডার কেন হচ্ছে, তার নির্ধারিত কারণ আমরা আবিষ্কার করতে পারিনি। সাধারণত ডায়াবেটিক রোগীদের অথবা কার্ডিওলজি রোগীদের এবং যারা অনেক দিন ধরে হাত ব্যবহার করে না, তাদের ফ্রোজেন শোল্ডার হয়।
প্রশ্ন : কীভাবে কাঁধের ব্যথার ব্যবস্থাপনা করেন আপনারা?
উত্তর : ফ্রোজেন শোল্ডারের যখন রোগী আসে, আমরা প্রথমত দেখি যে ফ্রোজেন শোল্ডারের কারণ কী? যদি আমরা দেখি সে হাত ব্যবহার করছে না তার সারভাইক্যাল স্পোনডোলাইসিসের ব্যথার জন্য অথবা কার্ডিওলজির ব্যথার জন্য। তাকে আমরা সেই চিকিৎসা দেব। কাঁধ যাতে নড়াচড়া করে, সে জন্য তাকে কিছু ব্যায়াম শিখিয়ে দেব। আমাদের চিকিৎসা হলো ব্যায়াম, গরম স্যাঁক আর জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন। এটি ফ্রোজেন শোল্ডারের ক্ষেত্রে। আর ডায়াবেটিস যদি থাকে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে বলব।
প্রশ্ন : আর সারভাইক্যাল স্পোনডিওলাইটিসের ক্ষেত্রে আপনারা কী করেন?
উত্তর : এ ক্ষেত্রে যে অনেকক্ষণ ধরে ঝুঁকে কাজ করবে না, সে একটা ব্যায়াম করবে। একটু গরম স্যাঁক দেবে। সে ঘাড়ের নিচে অনেক বালিশ দিয়ে শোবে না। আর যদি এর মধ্যে না হয়, তাহলে আমরা তাকে ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দেব।
প্রশ্ন : ফিজিওথেরাপিটা কত দিন ধরে চলতে থাকে?
উত্তর : আসলে আমরা সাধারণত ফিজিওথেরাপি ১৪/১৫ দিন দিয়ে থাকি। সেটা রোগীর ওপর নির্ভর করে। সে যদি নিজে ব্যায়াম করে সুবিধা বোধ করে, জীবনধারা পরিবর্তন করে, কিছু ওষুধ নিয়ে, তাহলে সে নিজে বাসায় ব্যায়াম করে চালাতে পারে। এটা যে চালাতেই হবে অনেক দিন ধরে, তা কিন্তু নয়।
প্রশ্ন : শোল্ডার ডিসলোকেশন বলে একটি শব্দ আমরা জানি। এটি আসলে কী এবং কেন হয়? তার সমাধান কী?
উত্তর : শোল্ডার ডিসলোকেশন সাধারণত কোনো খেলাধুলার সময় হয়ে যেতে পারে। আবার যাদের অনেক সময় লিগামেন্ট ল্যাগজিটি থাকে। অনেক মানুষের লিগামেন্ট ল্যাগজিটি থাকে।
প্রশ্ন : লিগামেন্ট ল্যাগজিটি বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
উত্তর : আপনারা যদি সার্কাস দেখেন, দেখবেন যে অনেক পা ঘুরিয়ে ওপরে ওঠিয়ে ফেলে। ফ্ল্যাক্সিবল এই জিনিসটি বোঝাচ্ছি। এ ধরনের কাঁধেও লিগামেন্টে অনেক সময় ল্যাগজিটি থাকে। তখন সহজে কাঁধটা ডিসলোকেট হয়ে যেতে পারে। অথবা প্যারালাইসিসের কারণে কোনো নিউরোলজিক্যাল সমস্যাগুলোতে যদি পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়, তখন ওই কাঁধকে সেই পেশিটা ধরে রাখতে পারে না। এতে একটুতেই কাঁধের গাঁট নিজের জায়গা থেকে আলাদা হয়ে আরেকটি জায়গায় চলে যায়।
প্রশ্ন : এ জাতীয় সমস্যা বোঝার উপায় কী?
উত্তর : প্রতিটা ডিসলোকেশনের ক্ষেত্রেই খুব গুরুতর ব্যথা হয়। তার শারীরবৃত্তীয় অবস্থাটা পরিবর্তন হয়ে যাবে। এটা রোগীও বুঝতে পারবে। রোগীর পাশে যে আছে, সে-ও বুঝতে পারবে। অনেক দিন ধরে যাদের হয়, তারা বুঝতে পারে অনেক সময়। জটিল ব্যথা হয়, তখনও বোঝা যায়।
আবার যদি বারবার হয় অনেক সময়, তখন আবার হয়। তখন আমরা একটি এক্স-রে করি। আর চিকিৎসকের কাছে এলে যদি ব্যথা হয়, তখন চিকিৎসকের কাছে এলে আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা দিই, পরামর্শ দিই।
প্রশ্ন : এ জাতীয় সমস্যা হলে কী ধরনের পরামর্শ আপনারা দেন, যাতে করে এই জাতীয় সমস্যা আবার না হয়? ফলোআপের ক্ষেত্রে আপনারা কোন কোন পরামর্শ দিয়ে থাকেন?
উত্তর : প্রতিটি ডিসলোকেশন হলো অর্থোপেডিক জটিলতা। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ডিসলোকেশনটা ঠিক করে দিই। ঠিক করে দিয়ে আমরা তাকে তিন সপ্তাহ হাতকে একভাবে রেখে দিতে বলি। তিন সপ্তাহ পর কাঁধের পেশি যাতে ঠিক হয়, সেই ব্যায়ামগুলো করতে বলি। কিছু নড়াচড়া আমরা সীমাবদ্ধ করে দিই। এই নড়াচড়া হলে কাঁধ ডিসলোকের হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেটা সব সময়ের জন্য হতে পারে। যাদের আমরা কনজারভেটিভ চিকিৎসা করি, তাদের সব সময়ের জন্য সাবধান থাকতে বলে দিই।
প্রশ্ন : সার্জিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে কখন?
উত্তর : যখন আমরা এক্স-রে করে দেখি যে ক্লিনয়েডের মার্জিন ছোট, তখন আমরা মনে করি অস্ত্রোপচারে যেতে হবে। অথবা তার সমস্যাটি বারবার হচ্ছে। একটা মানুষের যদি প্রতি মাসেই দু-তিনবার হয়, তখন আমরা তাকে সার্জারিতে যেতে বলি। অথবা কোনো খেলোয়াড়ের যদি হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে সার্জারি করে থাকি।
প্রশ্ন : সার্জারি করার পর কি আপনাদের কোনো পরামর্শ থাকে?
উত্তর : সার্জারির পর পরামর্শ থাকে, পেশিগুলো যেন তৈরি হয়। ফিজিওথেরাপি করতে হবে। এটিই আমাদের প্রধান পরামর্শ। সার্জারির পরপর তাড়াতাড়ি যেন ব্যায়ামটা শুরু করে দেয়।