চোখ কেন ট্যারা হয়

ট্যারা চোখ অত্যন্ত জটিল একটি সমস্যা। এটির প্রভাব অনেক সময় সারা জীবনই ভোগ করতে হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪০২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহম্মেদ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালযের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ট্যারা চোখ, অত্যন্ত জটিল একটি সমস্যা। অনেকেই এই সমস্যায় ভোগে। ট্যারা চোখ বিষয়টি কী এবং এর সমাধানের উপায় কী?
উত্তর : আমাদের দেশের মানুষের একটি কুসংস্কার আছে। জন্মের পরই যদি কারো চোখ বাঁকা হয়, মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজন, মুরব্বিরা ভাবেন যে লক্ষ্মী ট্যারা হয়েছে। ওর এই চোখের ব্যাপারে হাত দিও না। তোমার পরিবারের ভাগ্য ফিরে আসবে। এটি কিন্তু একটি কুসংস্কার। এই বাঁকা চোখ কেন হয়? জন্মের সময় কোনো আঘাত লাগলে, অথবা জন্মের সময় চোখের পেশি, যেটা চোখের নড়াচড়াকে সাহায্য করে, এই পেশি দুর্বল হতে পারে। আবার তৃতীয় স্নায়ু, চতুর্থ স্নায়ু, ষষ্ঠ স্নায়ুর- যেটা চোখের ভেতর পরিচালিত হয়- সেখানে কোথাও প্যারালাইসিস থাকতে পারে। এগুলো জন্মগত হতে পারে। হলে কী হয়? চোখের ল্যাটারাল র্যাকটাস অংশ পাশের দিকে টানে। মিডিয়াল র্যাকটাস অংশ নাকের দিকে টানে। যদি একটা দুর্বল হয়ে যায়, আরেক দিকে চোখটা দুর্বল হয়ে যায়, এ রকম ভাবে বেঁকে যায়, এই বেঁকে যাওয়ার কারণে অনেকেরই দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। কেন? ওই চোখ দিয়ে সে আর দেখতে পায় না। দেখে একটা চোখ দিয়ে যেটা সোজা সে দেখছে, অ্যাম্বলায়োপিয়া রোগ তৈরি হয়। এটি এমন একটি রোগ ওটার চোখের ভেতরে দেখে কিছু বোঝা যায় না। পরীক্ষা করে আমরা দেখতে পাই, তার এক চোখের পাওয়ারটা বেশি ছিল বা কম ছিল।
যদি একটি চোখের পাওয়ার তিনশর বেশি হয় আরেকটি ধরেন কম থাকল, আরেকটি সাড়ে চারশ হয়ে গেল, অথবা একটিতে শূন্য, আরেকটিতে তিনশর বেশি। এই ক্ষেত্রে তিনশর বেশি পাওয়ার যাদের ক্ষেত্রে থাকে, তারা কিন্তু ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। তখন দুই চোখ সমানভাবে না দেখতে পারলে একটি চোখ বেঁকে যায়। একে আমরা রিফ্লাকটিভ এরোর বলি। রিফ্লাকটিভ এরোর কী জিনিস? একটি জিনিসকে যদি আমরা সঠিকভাবে দেখতে চাই, সেটি বাধাগ্রস্ত হয়, সুতরাং দেখতে অসুবিধা হয়।
এ ছাড়া আমাদের দেশে কিন্তু অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। বাচ্চা খেলার সময় দুর্ঘটনা হতে পারে। আমাদের দেশে আমরা আইন মানি না। কত বছরের বাচ্চার ক্ষেত্রে কোন খেলনা ব্যবহার করতে হবে- সেটি জানি না। আবার কলম, পেন্সিল এগুলো চোখে ঢুকে যায়। দুই ভাইবোন হয়তো ঝগড়া লেগে আহত হয়ে যায়। এই ধরনের আহত হলেও এই পেশি দুর্বল হতে পারে। স্নায়ু প্যারালাইসিস হতে পারে। তাহলেও চোখটা স্বাভাবিকতা থেকে বেঁকে যেতে পারে। আরেকটি হলো রিফ্লাকটিভ এরোর। আরেকটি হতে পারে যে তার চোখে কোনো অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচারের কারণে কোনো জটিলতা হলেও হতে পারে।