স্তন ক্যানসার কেন হয়?

স্তন ক্যানসারের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। তাই স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতন হওয়া জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩৬৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. রওশন আরা বেগম। বর্তমানে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের রেডিওথেরাপি ও ক্যানসার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto
প্রশ্ন : স্তন ক্যানসারের প্রকোপ দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। স্তন ক্যানসার কী? এর পেছনের কারণগুলো কী?
উত্তর : স্তনের টিস্যু থেকে যে ক্যানসার হয়, তাকে স্তন ক্যানসার বলে। একটি লাম্প (পিণ্ড), একটি পুরোভাব স্তনের মধ্যে হতে পারে বা বোগলে একটি চাকা নিয়েও রোগী আসতে পারে। হাতে একটি লাম্প অনুভূত হয়, ব্যথা হয়, বোঁটায় পানিও বের হয়।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে রোগী এলে তার প্রধান অভিযোগ কী থাকে?
উত্তর : অনির্দিষ্ট যদি কোনো কারণ নিয়ে আসে, তার ওজন কমে যাচ্ছে, ক্ষুধামান্দ্য হচ্ছে, কিন্তু সে হয়তো খেয়াল করেনি, তখন তার সাধারণভাবে পরীক্ষা করতে গেলে, তার স্তন দেখলে আমরা একটি লাম্প পাই, তখন পর্যবেক্ষণ করে আমরা বের করি। আবার অনেক সময়, রোগী হয়তো স্তনের মধ্যে চাকা নিয়ে আসে। চাকা হয়তো অনেকদিন ধরে আছে, হঠাৎ করে এখন বড় হচ্ছে। অথবা তার বোঁটা থেকে কোনো তরল বের হচ্ছে। রক্তাভাব তরল।
প্রশ্ন : লাম্প হতে পারে বা তরল বের হতে পারে বলছিলেন, এ ছাড়া কি আরো কোনো লক্ষণ রয়েছে স্তন ক্যানসারের?
উত্তর : হ্যাঁ। যখন স্তনের মধ্যে বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকে তখন স্তনে সমস্যা নিয়ে আসে। এরপর যদি এটা অন্য জায়গায় চলে যায়, হাড়ে ব্যথা নিয়ে আসতে পারে, ফুসফুসে কোনো সমস্যা নিয়ে আসতে পারে, অথবা লিভারে কোনো সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। এভাবেও আসতে পারে। তখন আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি স্তনে একটি লাম্প আছে।
প্রশ্ন : এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে রোগী আসলে প্রাথমিকভাবে আপনারা কী করেন?
উত্তর : আপরা আগে টিস্যু ডায়াগনোসিসের ওপর খেয়াল করি। লাম্প থাকলে আমরা এফইনেসি করি। এরপর কিছু পেলে আমরা কোর বায়োপসি করি অথবা বায়োপসি করি। এটি করলে নিশ্চিত ভাবে ফলটি পেয়ে যাই।
প্রশ্ন : পর্যায় নির্ভর ও গ্রেড নির্ভর করে কিসের ওপর?
উত্তর : রোগী আসার পর রোগ নির্ণয় হয়ে গেলে আমরা পর্যায়ের ওপর খেয়াল করি। এ ক্ষেত্রে টিউমারের আকৃতি একটি ব্যাপার। বোগলে চলে যায় কি না, লিম্পনোড একটি ব্যাপার। আর মেটাস্টিটিক কোনো বিষয় যে কোথায় কোথায় আর বিষয়টি ছড়িয়েছে। নিয়মমাফিক পরীক্ষা করেই আমরা বের করি। লিভারের কার্যক্রম, কিডনির কার্যক্রম করা হয়। স্তনের এক্স-রে দেখা হয়। আল্ট্রাসোনোগ্রাম করে পেট দেখা হয়। নির্দিষ্ট পরীক্ষাও করা হয়। তার যদি অন্য অভিযোগ থাকে, তার মাথা ব্যথা থাকে তখন আমরা এমআরআই করি।
প্রশ্ন : স্তন ক্যানসার বাড়ছে কেন? এর কারণ কী?
উত্তর : জীবন যাপনের কিছু ধরনের কারণে আসে। যেমন ওজনাধিক্য, শিশুকে স্তন পান করানোর ইতিহাস, স্তন পান করালে তার ঝুঁকি কম থাকে। চিকিৎসার ফলাফলও তাদের ভালো পাওয়া যায়। তা ছাড়া নারীরা হয়তো কিছু হরমোন নিতে পারে, সেটিও এর একটি কারণ। বংশগত কিছু কারণ রয়েছে। মা, মেয়ে, বোন এদের থাকলে পরের জেনারেশনের হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। তাদের খুব তাড়াতাড়ি স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হয়।
প্রশ্ন : প্রতিরোধের বিষয়ে কোন জিনিসগুলো করতে হয়?
উত্তর : ৩০ বছরের দিকে এটি করতে হবে। আর যদি পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে সে আগেই চিকিৎসকের কাছে যাবে। আর সাধারণভাবে যারা ৩০ থেকে ৩২ বছর বয়স তাদের স্ক্রিনিংয়ের আয়ত্বে আনতে হবে। প্রতিবছর চিকিৎসককে দিয়ে স্তন পরীক্ষা করতে হবে। মাসিকভাবে সে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করবে।
প্রশ্ন : এই পরীক্ষাগুলো করতে সাধারণ মানুষ আসলে অনেক সময় সজাগ হয় না। এই বিষয়গুলোকে কীভাবে নেওয়া উচিত? এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
উত্তর : স্কুল বা কলেজের বাচ্চাদের যদি বলে দেওয়া হয়, দেখিয়ে দেওয়া হয় নিজস্ব পরীক্ষা কী, তাহলে তারা অবশ্যই পারবে। প্রতিমাসে ঋতুস্রাবের পর সে তার স্তন পরীক্ষা করবে। ক্লক ওয়াইজ, অ্যান্টি ক্লক ওয়াইজ সে পরীক্ষা করে দেখবে। বোগল দেখবে, গলার নিচে দেখবে। দেখে নিজের স্তন সে নিজেই প্রতি মাসে পরীক্ষা করে দেখতে পারে। কোনো রাবারের টুকরা বা বড়ুইের বিচির মতো বা মটর দানার মতো অনুভূতি হয় তখন সে চিকিৎসকের কাছে যাবে।
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা নেয়, চিকিৎসার পথে যদি ছেড়ে না দেয়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যদি ফলোআপ করে, তাহলে অনেক ভালো থাকতে পারে। দেখবেন অনেক স্তন ক্যানসারের রোগী আছে, যারা কেবল ফলোআপ করতেই আসে। তাদের রোগটি হওয়ার পর ১০-২০ বছর হয়ে গেছে। যদিও এটা ঠিক যে ২৫ বছর পরও তার আবার বিষয়টি হতে পারে। এজন্য ফলোআপে থাকতে হবে।