গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কেন ঝুঁকিপূর্ণ?

গর্ভাবস্থায় মাকে নিয়মিত চেকআপ করা প্রয়োজন। গর্ভকালীন চেকআপকে বলা হয় অ্যান্টিনেটাল কেয়ার। এ সময় ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ঝুঁকির বিষয়ে মায়ের প্রতি নজর দেওয়া হয়।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৩৫৮তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ফেরদৌস মহল রুনি। বর্তমানে তিনি উত্তরা আধুনিক মেডিকেলের প্রসূতি ও ধাত্রী বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : গর্ভকালীন যত্ন বা অ্যান্টিনেটাল কেয়ার বিষয়টি আসলে কী?
উত্তর : একজন গর্ভবতী মাকে গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে দেখা ও কিছু পরামর্শ দেওয়াকে আমরা অ্যান্টিনেটাল কেয়ার বলি। ধরে নিলাম, এটা নয় মাস সাত দিন। এ সময় যে যত্ন নিতে হয়, একে বলে অ্যান্টিনেটাল কেয়ার।
প্রশ্ন : এই যত্নের ভেতরে প্রকৃতপক্ষে কোন কোন বিষয় রয়েছে?
উত্তর : একজন মায়ের যখন থেকে ঋতুস্রাব হলো না, সে বুঝতে পারল যে গর্ভবতী। পরের মাস থেকেই তার উচিত চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলা। আমরা যদি একে হিসাব করি যে নয় মাস সাত দিন, প্রথম সাত মাস সাত দিন, তাহলে প্রথম দিকে সাত মাস পর্যন্ত আমরা বলি প্রতি মাসে মাসে সে যাবে চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক দেখবে, তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে, তার উচ্চ রক্তচাপ, ওজন সবকিছু দেখবে, ঠিকমতো বাচ্চা বৃদ্ধি হচ্ছে কি না, এ জিনিসগুলো দেখবে। তাকে কিছু পরামর্শ দেবে। সেই জিনিসগুলো নিয়ে প্রথম সাত মাস সে মাসে মাসে যাবে। তার পর নয় মাস পর্যন্ত প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর তার যাওয়া উচিত, যদি তার পক্ষে সম্ভব হয়। নয় মাসের পরে গিয়ে আমরা বলি প্রতি সপ্তাহে যেতে। কারণ, যেকোনো মুহূর্তে তার প্রসবের ব্যথা উঠতে পারে। যদিও আমাদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, চারটা সাক্ষাৎ হলেই আমরা বলি নিয়মিত অ্যান্টিনেটাল চেকআপ। একটি হলো ১৬ সপ্তাহের, চার মাসের কাছাকাছি। একটা হলো ছয় মাস, মানে ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের দিকে। একটি হলো ৩২ সপ্তাহে, আট মাসের দিকে। আরেকটি নয় মাসের দিকে। এই চারবার যদি কোনো মা সাক্ষাৎ করে চিকিৎসকের সঙ্গে, তাহলেও তাকে নিয়মিত অ্যান্টিনেটাল চেকআপের মধ্যে ফেলতে পারব আমরা।
প্রশ্ন : এই চেকআপের মধ্যে কী দেখেন আপনারা? একজন মায়ের কোন কোন বিষয় খেয়াল করেন?
উত্তর : আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য এই মা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে কি না, সেটা দেখা। এই চেকআপের সময় মায়েরা তার পুষ্টি, তার বিশ্রাম, তার ওজন—এ পরামর্শগুলো পেতে পারে। এই চেকআপের সময় আমরা বলতে পারি, পরে সে পরিবার পরিকল্পনার জন্য কী করবে সে বিষয়ে।
এই চেকআপের সময় দম্পতি সিদ্ধান্ত নেবে প্রসব কোথায়, কোন অবস্থানে করতে চায়—এসব বিষয়ে। সেভাবে আমরা তাকে পরামর্শ দিতে পারি। আমাদের উদ্দেশ্যই হলো একজন মাকে সুস্থ বাচ্চা দেওয়া।
প্রশ্ন : ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা বলতে কোন বিষয়গুলো বোঝানো হচ্ছে?
উত্তর : একজন মায়ের বয়স খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন মা যদি ১৫ থেকে ১৬ বছরের আগে গর্ভধারণ করে, আবার পঁয়ত্রিশের পরে গর্ভধারণ করে, এটা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। একজন মায়ের যদি রক্তচাপ বেশি হয়, তার হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে গেল, পায়ে পানি এলো, চোখে ঝাপসা দেখল, মাথা ব্যথা হলো—এ ধরনের কিছু পরীক্ষা করে দেখলাম, এই বাচ্চা বৃদ্ধি হয়নি। এর মানে মায়ের পুষ্টি ঠিকমতো হয়নি। মায়ের বিশ্রাম ঠিকমতো হয়নি। সে কারণে এটি একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা হতে পারে। অথবা এমন হতে পারে, আমরা চেকআপ করতে গিয়ে অ্যান্টিনেটাল চেকআপে দেখলাম একটা আলট্রাসোনোগ্রাম করে, তার প্লাসেন্টা (ফুল) নিচের দিকে। এই মা ভীষণ ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় তার রক্তপাত শুরু হতে পারে। অথবা এই মায়ের রক্তশূন্যতা আছে, ঠিকমতো পুষ্টি হয়নি বলে। এ রকম অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় রয়েছে।
প্রশ্ন : প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস বলে যে বিষয়টি আছে, এটি আসলে কখন হতে পারে? ইদানীং খুব দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে ডায়াবেটিস হয়ে যাচ্ছে।
উত্তর : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মানে এই মায়ের আগে ডায়াবেটিক ছিল না। এটি ধরা পড়েছে যখন সে গর্ভবতী তখন। সেখানে যদি না খেয়ে বা ফাস্টিং রক্তের সুগার ছয়ের ওপরে চলে যায়, খালি পেটে এবং খাওয়ার দুই ঘণ্টা পড়ে রক্তের শর্করা যদি ৭ দশমিক ৮ মিলিমোল কিংবা তারও ওপরে যায়, তাহলে এই মাকে কিছু গ্লুকোজ খাইয়ে নিয়ে এর পর আবার পরীক্ষা করে দেখি।
এই ডায়াবেটিস এ কারণেই আমার জানা দরকার যে, এর কিছু প্রভাব বাচ্চার ওপরে আর কিছু মায়ের ওপরে পরে। কারণ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যদি থাকে, এটা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, এটা একটি অস্বাভাবিক শিশু হতে পারে। তার গঠনগত অস্বাভাবিকতা হতে পারে। এমনকি বাচ্চাটা মরে যেতে পারে। তার একটি অঙ্গহানি হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের বিষয়গুলো বাচ্চার ক্ষেত্রে হতে পারে।
প্রশ্ন : ওই সময়ে সেই মাকে আপনারা কীভাবে ব্যবস্থাপনা করেন?
উত্তর : মা যখন গর্ভাবস্থায় থাকে, শুরুতেই আমরা তার রক্তের কিছু পরীক্ষা করে নিই। এর মধ্যে একটি হলো ডায়াবেটিসের পরীক্ষা। প্রতিটি রুটিন চেকআপের মধ্যে তার কিন্তু প্রসাবের পরীক্ষা করে নিই। তার মধ্যে একটি ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা হয়। প্রতিটি রুটিন চেকআপের মধ্যে তার প্রস্রাবের পরীক্ষাটা আমরা করে নিই।
পাশাপাশি তাকে জীবনযাপনের অভ্যাস নিয়ে কিছু বলতে হবে। খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কিছু বলতে হবে। যেমন কার্বোহাইড্রেট জাতীয় যে খাবার, সেটা দিতে হবে। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।