নারীদের ক্ষেত্রে পুষ্টি নিয়ে অবহেলা নয়

সাধারণত দেখা যায়, নারীদের ক্ষেত্রে পুষ্টির বিষয়টি একটু অবহেলিত থাকে, বিশেষ করে আমাদের উপমহাদেশে। নারীদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পুষ্টির গুরুত্ব কতখানি, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৯০০তম পর্বে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ শবনম মোস্তফা। বর্তমানে তিনি শিওর সেল মেডিকেলের নিউট্রিশন বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : নারীদের জন্য পুষ্টির গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর : আসলে নারী পুষ্টি আমাদের একটি বড় সচেতনতার বিষয়। কারণ, পর্যাপ্ত পুষ্টি একজন নারীকে সমাজে ভালো কাজ করতেই সাহায্য করে না, এর সঙ্গে মাতৃত্বকালীন পুষ্টিও জড়িত। আর মাতৃত্বকালীন পুষ্টি মানে আমাদের পরবর্তী যে প্রজন্ম আসছে, তাদের স্বাস্থ্য, তাদের বৃদ্ধি।
নারী পুষ্টি কিন্তু কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। আর প্রধান বিষয়টি কিন্তু মাতৃত্বকালীন পুষ্টি। একটি সুস্থ শিশু, সুস্থ আগামী, সুস্থ প্রজন্ম।
প্রশ্ন : কর্মজীবী নারী বা গৃহিণী নারী—পুষ্টির কোনো তারতম্য কি রয়েছে?
উত্তর : পুষ্টির তারতম্য কিছুটা রয়েছে। তবে সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশে যে নারীরা রয়েছে, তারা কিন্তু পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না। তারা কাজ করছে অনেক বেশি হয়তো, তবে পুষ্টিটা সঠিকভাবে পাচ্ছে না। এটা কিন্তু ঘর থেকেই দেখতে পারি। আমরা কী করছি? মাছের বড় টুকরোটা রেখে দিচ্ছি স্বামীর জন্য, বাবার জন্য কিংবা ছেলের জন্য। নারী নিজেই জানে না যে তার পুষ্টি প্রয়োজন। এই সচেতনতাটা আমাদের বাড়াতে হবে। শেষ যে পরিসংখ্যান হয়েছিল বাংলাদেশে, এর প্রতিবেদনে কিন্তু এসেছে যে নারী কেবল ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট পুষ্টির অভাবে ভুগছে না, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পুষ্টির অভাবেও ভুগছে। এটি কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পর্যায় চলে গিয়েছে। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের মধ্যে আমরা বলতে পারি আয়রন, জিংক, ফলিক এসিড এগুলোর অভাব। এগুলো দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে স্বাস্থ্যে। তাই অবশ্যই আমাকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সর্বপ্রথম কথা হচ্ছে এটি। স্বাস্থ্যকর চর্বির মধ্যে কিছু ভালো মানের চর্বি থাকতে হবে, ভালো মানের প্রোটিন থাকতে হবে। আর রোগ প্রতিরোধের জন্য কিছু ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, কিছু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবারে আমরা যেতে পারি।
কারণ, নারীদের ক্ষেত্রে স্তনের ক্যানসার খুব প্রচলিত। একটি বয়সের পরে গিয়ে এটি খুব প্রচলিত হয়ে যায়। এই স্তন ক্যানসারকে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা যদি ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ কিছু খাবার খাই, তাহলে ভালো। সোজা কথা যে লাল, হলুদ বর্ণের সবজি কিংবা ফল, এগুলো খেতে হবে। এগুলোর উপকারিতা প্রতিটি বয়সের মানুষের থাকছে। যেমন ধরুন, ফলিক এসিড। একে আমরা ভাবি গর্ভাবস্থার পুষ্টি। এটা কিন্তু কেবল গর্ভাবস্থার পুষ্টি নয়, এর অনেক স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। এটি বয়ঃসন্ধিতে প্রয়োজন, এমনকি প্রবীণ নারীদেরও প্রয়োজন। প্রবীণদের কেন জরুরি? এ সময় আমাদের ডিমেনসিয়া চলে আসছে, আলঝাইমার রোগ আসছে। এ ধরনের পুষ্টি এগুলো প্রতিরোধে সাহায্য করে। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষ কিছু ক্যানসারও প্রতিরোধ করছে।