মেনোপজের পরে রক্তক্ষরণ কেন হয়?

মেনোপজের পরেও অনেকের রক্তক্ষরণ হয়। একে পোস্ট মেনোপজাল ব্লিডিং হয়। এ সমস্যা হওয়ার কারণ কী? এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৩৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. লুৎফা বেগম লিপি। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও ধাত্রী বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : মেনোপজ হওয়ার পরও কোন কোন কারণে এই রক্তক্ষরণ হয়?
উত্তর : সাধারণত যাদের পোস্ট মেনোপজাল ব্লিডিং হয়, এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো না কোনো ক্যানসারের জন্য সমস্যা হয়। ক্যানসারের মধ্যে ধরা যায় জরায়ুর যে মুখটা আছে, সে মুখের ক্যানসার। জরায়ুর যে শরীর, যেখানে বাচ্চা ধারণ করে, এন্ড্রোমেট্রিয়াম, সেখানে তিনটি লেয়ার আছে, এর মধ্যে যদি ক্যানসার হয় অথবা তার এই লেয়ারটা যদি বেশি ফুলে যায়, তাকে বলা হয়, এন্ড্রোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া। অথবা তার বার্ধক্যজনিত কারণে সেনাইল এন্ড্রোমেট্রাইটিস হয়। তখন ভেতরে একটি সংক্রমণ হয়ে যায়। সেই সংক্রমণের জন্য অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়।
প্রশ্ন : এই রক্তক্ষরণের কি কোনো ধরন রয়েছে?
উত্তর : ক্যানসারের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। যদি জরায়ুমুখের ক্যানসার হয়, তাহলে চালধোয়া পানি থাকে, সেই রঙের ডিসচার্জ প্রথমে আসবে। অনেক সময় দেখা যায় অনেক দুর্গন্ধযুক্ত। এই ধরনের স্রাব নিয়ে যখন আমাদের কাছে আসে, তখন আমাদের মনে হয় কিছু নিশ্চয় আছে।
প্রশ্ন : এ জাতীয় সমস্যা নিয়ে এলে নিশ্চিত করার জন্য কী কী ধরনের পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন?
উত্তর : এটি তো বললাম শুধু ক্যানসারের জন্য। আর বাকি কেসে যেমন জরায়ুমুখে পলিপ থাকতে পারে, অনেক সময় দেখা যায় শরীরে কিছু টিউমার থাকে, সেগুলো সাবসাইড অবস্থায় থাকে, পরে দেখা যায় অন্য ধরনের পরিবর্তন হওয়ার কারণে আবার রক্তক্ষরণ হয়। ভ্যাজাইনায় যে অংশ, যোনিপথ সেখানেও যদি কোনো টিউমার হয়, তখনও কিন্তু এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে।
আবার অনেক সময় দেখা যায়, গ্রামে বেশি বাচ্চাকাচ্চা হলে জরায়ু নিচের দিকে বের হয়ে আসে। দেখা যায়, প্রথম দিকে তারা গুরুত্ব দেয় না। তবে পরে দেখা যায় অঙ্গটা সব সময় বাইরে থাকছে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গে লেগে লেগে সেখানে আলসার হয়ে যায়, সে আলসার থেকে অনেক সময় রক্তক্ষরণ হয়।
প্রথমেই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে আসলে সমস্যাটি কেন হচ্ছে? পরীক্ষা ছাড়া এর কোনো উপায় নেই। আমাদের অবশ্যই রোগীদের ইন্টারনাল (অভ্যন্তরীণ) পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে জরায়ুর কোন জায়গা থেকে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
প্রশ্ন : সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনারা কী ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন?
উত্তর : প্রথমে আমরা একটি পরীক্ষা করি। রোগীর ইতিহাস জানার পরে তাকে আমরা পেটের ওপর দেখব যে তার টিউমার বা চাকা আছে কি না। এটি দেখা হয় আলট্রাসনোগ্রাফি করার আগেই। দেখা যায় হরমোন নিঃসরণ করে এমন কিছু ওভারিতেও টিউমার হয়। টিউমারের কারণে তার এই ধরনের ঋতুস্রাব হতে পারে।
আমরা বলছি, ৫২ বছরে তার ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ধরেন তার ৫৫ বছর বয়স হয়ে গেছে, তবে তার এখনো ঋতুস্রাব চলছে। বন্ধই হয়নি। এ অবস্থাকে সংকেত হিসেবে ধরতে হবে। কেন তার বন্ধ হলো না? তখন আমরা তাকে পরীক্ষা করি। দেখি কোনো চাকা বা টিউমার নেই, তখন অবশ্যই আমরা পরীক্ষা করি। এই পরীক্ষা করে জরায়ুমুখের ক্যানসার পলিপ সবই আমরা স্বচক্ষে দেখতে পারব। ক্যানসার থাকলে তো অবশ্যই আমাদের হিস্টোপ্যাথোলজি করতে হয়। জরায়ুমুখের কোনো ক্যানসার বা যদি কোনো বৃদ্ধি আমরা দেখি, চাকা দেখি তাহলে সেখান থেকে মাংস কেটে নিয়ে পরীক্ষা করতে দিই। যদি পরীক্ষায় আসে যে তার ক্যানসার, তখন তার সেই অনুযায়ী পরীক্ষা হয়। যদি দেখা যায় ক্যানসার নয়, এ রকম কোনো অবস্থা যদি আসে, তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হয়। এন্ড্রোমেট্রাইটিসে অনেক ধরনের সংক্রমণ থাকে, তখন অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা দিলে তারা ভালো হয়ে যায়।
তবে রিপ্রোডাকটিভ বয়সে বিষয়টি যতটা সহজ, পোস্ট মেনোপজে অনেকে কিন্তু খুব অবহেলার মধ্যে থাকে। এতে অনেক জটিলতা হয়। তো দেখা যায়, রোগী যখন আসে তখন অনেক অগ্রবর্তী পর্যায় নিয়ে আসে। তখন দেখা যায় যেখানে অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসা দেওয়া যেত, সেখানে আর দেওয়া যায় না। থেরাপি দিতে হয়। তবে অবশ্যই যদি পরিপূর্ণ চিকিৎসা আমরা করি, রোগীদের সারানো সম্ভব।
প্রশ্ন : ক্যানসারের ঝুঁকির মধ্যে কারা পড়েন?
উত্তর : পোস্ট মেনোপজাল ব্লিডিং মেনোপজের পরে হয়। তাহলে অবশ্যই ৫২ বছর বা তার পরের বয়সই ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত দেখা যায় যে যদি কোনো সংক্রমণ আগের জীবনে থেকে থাকে, সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেট ইনফেকশন যেগুলো আছে, সেগুলো থাকলে সে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। অনেক সময় দেখা যায় অনেকে বিড়ি বা তামাক খায়, এটিও কিন্তু ঝুঁকির কারণ। আবার কারো যদি অনেক সঙ্গী থাকে, সেও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।