করোনাভাইরাস : আইসোলেশনে থাকাকালে যে ৭টি কাজ করবেন

বাংলাদেশে গতকাল বুধবার ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছে ৭৯২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনের রয়েছে ১৬ হাজার ৮৫৬ জন।
আইসোলেশনে থাকার সময় নানা ধরনের উপসর্গ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ভোগে অনেকে। অনেকে জানতে চায়, এসব উপসর্গ থাকলে কী করা উচিত? আইসোলেশনে কীভাবে থাকা উচিত?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. লুবনা আফরোজ ইভা। তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ বা নেগেটিভ যাই আসুক না কেন, করোনা সংক্রমণের এ সময়টাতে কারো মধ্যে কোভিডের মতো উপসর্গ থাকলে তার অবশ্যই আইসোলেশনে থাকা উচিত। একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টাদের একজন ডা. মুশতাক হোসেনও। তিনি বলেন, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আইসোলেশনে থাকার বিকল্প নেই। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘কোভিডের উপসর্গ হিসেবে যদি কারো জ্বর থাকে, তাহলে সেটি সেরে যাওয়ার পর, কোন ধরনের ওষুধ সেবন ছাড়া যদি তিনি পরপর তিন দিন সুস্থ বোধ করেন, স্বাভাবিক থাকেন তাহলে ধরে নিতে হবে যে তিনি করোনামুক্ত। তার যদি অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকে, তাহলে তিনি নিশ্চিত হতে পারেন।’
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী, যদি তার শারীরিক অন্য কোনো সমস্যা না থাকে, তাকে ১৪ দিন পর করোনামুক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে বলেও জানান তিনি।
পুরো দিনের একটি রুটিন তৈরি করুন
আইসোলেশনে থাকার সময় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কী কী করবেন, তার একটি রুটিন বা তালিকা তৈরি করুন এবং মেনে চলার চেষ্টা করুন। খাওয়া, ঘুম, শরীর চর্চা, বিনোদনমূলক কাজ কখন কত সময় ধরে করবেন, তার আলাদা আলাদা তালিকা তৈরি করা যেতে পারে।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তির যিনি দেখাশোনা করেন, সে ব্যক্তির সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এবং মাস্ক ব্যবহার করে যোগাযোগ করা, কথাবার্তা বলা যেতে পারে।
মনোবল শক্ত রাখুন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে অনেকেই ঘাবড়ে যান। মনোবল হারিয়ে ফেলেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, মনোবল না হারানো এবং মানসিকভাবে শক্ত থাকাই এসব লক্ষণ থেকে সেরে ওঠার প্রাথমিক শর্ত। ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বাসায় থাকলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জ্বর, সারা গায়ে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়া ইত্যাদি।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ঘুমের বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে আইসোলেশনের থাকার সময় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের আট ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। সেইসঙ্গে দুপুরে এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
তবে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার কারণে অনেকেরই শরীর অনেক সময় বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে তার বেশি ঘুমানোর দরকার হতে পারে।
আইসোলেশনে থাকার সময় যাদের মনে হয় যে ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, যার কারণে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কারণে অনেক সময় এমনটা মনে হতে পারে।
পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এ সময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সবল হয়। অনেকে কোভিডের উপসর্গ থাকলে বেশি বেশি গরম পানি, চা, স্যুপ ও গরম পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
শারীরিক ব্যায়াম করুন
আইসোলেশনে থাকার সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে শরীরচর্চা করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে এ সময় ভারী কোনো ব্যায়াম না করার পরামর্শ দিয়েছেন আইইডিসিআরেরর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘শারীরিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শরীরটাকে সচল রাখার জন্য হালকা ব্যায়াম করতে হবে। তবে যেহেতু এ সময় জ্বর থাকে, তাই ভারি ব্যায়াম এড়িয়ে চলতে হবে।’
রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ
রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। আর সেটি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছালে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হতে পারে। সে কারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বোঝা যায় পালস অক্সিমিটার নামে যন্ত্রের সাহায্যে।
ডা. লুবনা আফরোজ বলেন, ‘স্বাভাবিক অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি থাকে মিনিটে ১২ থেকে ১৮ বার। কিন্তু আক্রান্ত হলে তা হয়ে যায় ২৮ থেকে ৩০ বার।’
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যেহেতু করোনাভাইরাসের এখনো কোনো ধরনের প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই, তাই এর চিকিৎসা মূলত হয় উপসর্গভিত্তিক। যাদের জ্বর রয়েছে, তাদের জ্বরের ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। কাশি থাকলে কাশির ওষুধ। জ্বর বেশি হলে একসঙ্গে দুটো ওষুধ খাওয়া যেতে পারে বলে জানান ডা. লুবনা আফরোজ।
যাদের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং বয়স বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্কতা নিতে হবে।