শাবির ‘চেতনা-৭১’ বিজয়ের কথা বলে

প্রাথমিক অবস্থায় অস্থায়ীভাবে নির্মিত ভাস্কর্যটি স্থায়ী রূপ পায় ৩০ জুলাই, ২০১১। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দুই দশক পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এটাই প্রথম ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের স্থায়ী ভাস্কর্য। একই সমীকরণে এটা সিলেটেরও প্রথম। সমগ্র সিলেটে এর আগে মুক্তিযুদ্ধের কোনো ভাস্কর্য স্থাপিত হয়নি। নাম ‘চেতনা ৭১’। মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত সাদামাটা কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ একটি স্থাপনা এটি।
এরই মধ্যে সারা দেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যে আদর্শ ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন, তারই পার্থিব রূপ হচ্ছে চেতনা ’৭১ ভাস্কর্য। ভাস্কর্যে স্থান করে নেওয়া ছেলেটির হাতে উড়ন্ত পতাকা আর মেয়েটির হাতের সংবিধান যেন এ দেশের পূর্ণ প্রতিচ্ছবি। দূর থেকে দেখলে মনে হয় খোলা আকাশের নিচে ভাস্কর্যটি নির্ভীক প্রহরীর মতো স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তখনই মন নেচে উঠবে। মনে মনে আওড়াতে চাইবেন এটাই তো চেয়েছিলাম।
প্রায় ছয় লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিল্ডিংয়ের উত্তরপাশে ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে ২০০৫-০৬ সেশনের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে। এ আয়োজনে অর্থায়ন করেন শাবিপ্রবির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকও সহায়তা করে। ২০১১ সালের ৩০ জুলাই এ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন শাবিপ্রবির তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন।
ভাস্কর্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এবং একাডেমিক ভবনগুলোর লাল ইটের সঙ্গে মিল রেখে ভিত্তি বেদির তিনটি ধাপ বানানো হয়েছে লাল ও কালো সিরামিক ইট দিয়ে। এর মধ্যে নিচের ধাপের ব্যাস ১৫ ফুট, মাঝের ধাপ সাড়ে ১৩ ফুট এবং ওপরের ধাপ ১২ ফুট। প্রতিটি ধাপ ১০ ইঞ্চি করে উঁচু। বেদির ধাপ তিনটির ওপরে মূল বেদিটি চার ফুট উঁচু, তার ওপরে আট ফুট উঁচু মূল ফিগার। ভাস্কর্যের নকশা প্রণয়ন এবং নির্মাণ সম্পন্ন করেন নারায়ণগঞ্জে স্থাপিত ‘নৃ-স্কুল অব স্কালপচার’-এর প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী মোবারক হোসেন নৃপাল।
শাবিপ্রবির চেতনা ’৭১ শুধু এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নয়, এটা আমাদের দেশের প্রত্যেক নাগরিকের চেতনা শাণিত করার স্থাপনা। বিজয়ের এই স্থাপনা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে, সুউচ্চ হবে আমাদের স্বাধীনতা। বিজয়ের এ মাসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।