‘ব্যাংক খাতের দুর্বলতা গভর্ন্যান্সের অভাবে’

দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা মূলত গভর্ন্যান্সের অভাব থেকে উদ্ভূত, কেবল বহিরাগত অর্থনৈতিক আঘাত থেকে নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক ড. মো. মাঈন উদ্দিন। তিনি বলেন, এই খাতের সংস্কার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ঋণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে বাইরের প্রভাব থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আজ রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন অডিটোরিয়ামে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও প্রযুক্তি সম্মেলন (আইসিবিটি ২০২৫) সমাপ্তিতে তিনি এসব কথা বলেন। সভাটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস স্টাডিজের ডিন অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম। এই সম্মেলনের আয়োজন করে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির ওটিএইচ অ্যামবার্গ-ওয়েইডেন।
অনুষ্ঠানে দেশের ব্যাংকিং খাতের করপোরেট গভর্ন্যান্স, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর দুর্বলতা এবং সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের ব্যাংক কর্মকর্তা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শিক্ষাবিদরা আলোচনা করেন ।
অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, ব্যাংকিং খাতে গভর্ন্যান্সের কাঠামো শক্তিশালী করা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা এবং নিয়ন্ত্রক মানদণ্ড যথাযথভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শুধুমাত্র নিয়ম প্রণয়নের উপর নির্ভর করে না উল্লেখ্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হোসাইন আহমেদ এনামুল হুদা বলেন, নৈতিক আচরণ, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে হবে।
এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমেদ, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহাইল আর কে হোসেন, সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাশরুর আরেফিন, পূবালি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মুহাম্মদ আলী, মার্চেন্টাইল ব্যাংকের এমডি মতি উল হাসান প্রমুখ।
প্যানেল সদস্যরা সাম্প্রতিক নিয়ন্ত্রক সংস্কার বাস্তবায়ন, বোর্ড কার্যকারিতা উন্নয়ন, নন-পারফর্মিং লোন মোকাবিলা, উদ্ভাবন ও নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য এবং দৃঢ় করপোরেট গভর্ন্যান্স সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপরে আলোচনা করেন। সভা সমাপনীতে অংশগ্রহণকারীরা একমত হন, ব্যাংক গভর্ন্যান্সকে শক্তিশালী করা কেবল নিয়ন্ত্রক দায়িত্ব নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব এবং টেকসই বৃদ্ধির জন্য একটি কৌশলগত অপরিহার্য পদক্ষেপ। অনুষ্ঠানটি আইসিবিটি ২০২৫-এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন গতকাল শনিবার ইউএপি ক্যাম্পাসে শুরু হয়। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ব্যবসা ও প্রযুক্তির আন্তঃসম্পর্ক। সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ২৫০ জন অংশগ্রহণকারী ১০০টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। কর্মসূচিতে ছিল বিদেশ থেকে আগত ১০জন বিশিষ্ট কী-নোট বক্তার বক্তব্য, বিভিন্ন উপস্থাপনা, ইন্টারেক্টিভ সেশন ও প্যানেল আলোচনা।