‘দারিদ্র্য বিমোচনে কৃষিশ্রমিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ’

অকৃষি খাতের একজন শ্রমিকের তুলনায় কৃষি খাতের একজন শ্রমিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনে তিনগুণ বেশি অবদান রাখে। অন্য সব কিছু অপরিবর্তিত থাকলে কৃষি খাতে নিয়োজিত একজন শ্রমিকের আয় ১ শতাংশ বাড়লে দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশে।
আজ মঙ্গলবার ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
‘বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা খাতের কৌশলগত বিবেচনাসমূহ’ শিরোনামে ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রধান মাহফুজার রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল ইসলাম। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান, এর গঠন এবং উৎপাদনশীলতা পরিমাপ, সেই সঙ্গে এই খাতের চ্যালেঞ্জ ও দুর্বলতা তুলে ধরে এই সেমিনারে তিনটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল বায়েস এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পরামর্শক ড. এস এম ফখরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের ইউনিট কো-অর্ডিনেটর অ্যান্ড্রু জেনকিনস, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের উপপ্রধান মনিরুল ইসলাম।
সেমিনারে বলা হয়, শিল্পায়ন এবং নগরায়নের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। দেশের মোট জনসংখ্যার তিন চতুর্থাংশেরও বেশি গ্রামাঞ্চলে বাস করে এবং এখনও তারা জীবিকার জন্য কৃষির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। তাই আজকের এই গবেষণাগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন যা উচ্চ মাত্রার উৎপাদনশীলতা ও বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধিতে ব্যাপকহারে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
অধ্যাপক আবদুল বায়েসের ‘কৃষি, দারিদ্র্য বিমোচন ও খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, কৃষিখাতে চলমান সরকারি নীতিমালা এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকলে তা টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বিষয়টা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন কৃষি জমি অনবরত কমছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তা ছাড়া কৃষিখাত আরো নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুর্বল ব্যবস্থাপনা, স্বল্প কৃষিঋণ ও অপর্যাপ্ত মূল্যের শৃঙ্খল। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন করতে হলে বাংলাদেশকে এ সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।
ড. এস এম ফখরুল ইসলাম তাঁর ‘আপেক্ষিক সুবিধা, বাণিজ্যকরণ ও ভ্যালু চেইন’ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন বেশ কিছু পণ্য আমদানি বিকল্প কিংবা রপ্তানির জন্য; দক্ষতা ও প্রতিযোগিতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। বাংলাদেশ এখন উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানি করে আন্তর্জাতিক বাজারের মাধ্যমে কৃষকের আয়ের উন্নতি ঘটাতে পারে। উন্নতর প্রযুক্তি ব্যবহার করে গম ও ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমদানি প্রতিকল্পের মাধ্যমে বিদেশ-নির্ভরতা হ্রাস করা যেতে পারে।’