পাকুন্দিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে গাছ আলু

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় বর্তমানে গাছ আলু (স্থানীয়ভাবে পান আলু) চাষ বাণিজ্যিকভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। একসময় বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত জমিতে এর চাষ হলেও, এখন এটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে আবাদ হচ্ছে। মাটির নিচে নয়, বরং লতানো এই সবজি আলু মাচা বা গাছে ঝুলে থাকে, যা দূর থেকে দেখলে সবুজ জঙ্গলের মতো মনে হয়।
পাকুন্দিয়ার কৃষকদের কাছে এই চাষ অত্যন্ত লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। তাদের দাবি, গাছ আলু চাষে খরচ অনেক কম, কারণ এতে সার বা কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। ধুন্দল বা চিচিঙ্গা তোলার পর একই মাচায় এই আলুর চারা রোপণ করা যায় এবং মাত্র তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়।
কৃষক আব্দুল কাদের জানান, একবিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা, আর আলু বিক্রি করে তিনি প্রায় এক লাখ টাকা পেয়েছেন। অর্থাৎ খরচ বাদ দিয়ে তিনি ভালো লাভ করেছেন।
স্থানীয় রহিম মিয়া বলেন, বর্ষার শেষে যখন বাজারে অন্যান্য সবজির সরবরাহ কম থাকে, ঠিক তখনই গাছ আলুর ফলন হয়। এই কারণে বাজারে এর চাহিদা তুঙ্গে থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। বর্তমানে তারা কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় গাছ আলু বিক্রি করছেন, যা সাধারণ আলুর (কেজি ২৫ টাকা) দামের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি। কৃষকদের হিসাব অনুযায়ী, মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এক মৌসুমেই লাখ টাকা লাভ হচ্ছে। এই অতিরিক্ত লাভের কারণেই প্রতিদিন নতুন নতুন কৃষক এই আবাদে ঝুঁকছেন।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা গাছ আলুর এই বাণিজ্যিক চাষকে দেশের কৃষি খাতের জন্য এক নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। বিশেষত বর্ষা শেষে জমিতে যখন অন্য কোনো ভালো ফসল উৎপাদন হয় না, তখন গাছ আলু কৃষকের জন্য একটি লাভজনক বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।
চরফরাদী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, এটি এলাকার কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা। খুব অল্প খরচে ভালো ফলন পাওয়ায় এর চাহিদা বাড়ছে। সঠিক সময়ে চারা রোপণ ও মাচার যত্ন নিতে তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তার আশা, পাকুন্দিয়া উপজেলা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য একটি আদর্শ মডেল হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-ই-আলম জানান, গাছ আলু একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি। যেহেতু এটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য, তাই বিদেশে রপ্তানিরও উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে পাকুন্দিয়ায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে গাছ আলুর আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০০ মেট্রিক টন।