কোটালীপাড়ায় লক্ষ্মী প্রতিমা বিক্রির ধুম

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় দুইশ বছরের পুরোনো হাট ঘাঘর বাজারে লক্ষ্মী প্রতিমা বিক্রির ধুম পড়েছে। দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরের দিন থেকে এই ঘাঘর বাজারে লক্ষ্মী প্রতিমা বিক্রি শুরু হয়ে চলে পূজা শুরুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।
শুধু ঘাঘর বাজারই নয়; উপজেলার কালিগঞ্জ, নৈয়ারবাড়ি, পীড়ারবাড়ী, কান্দি, ধারাবাশাইল, শুয়াগ্রাম, চৌধুরীরহাট, কলাবাড়ি, রামশীল, জহরেরকান্দি, ওয়াপদারহাট, রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, মনোহর মার্কেট, পশ্চিমপাড়, সিকিরবাজার, রাজাপুর, কুশলা, লাখিরপাড় ও হিরণ বাজারসহ প্রায় অর্ধশত স্থানে লক্ষ্মীপ্রতিমার হাট বসে। এসব হাট থেকে সানাতন ধর্মাবলম্বীরা লক্ষ্মী প্রতিমা কিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা দিয়ে থাকেন।
পঞ্জিকা অনুসারে, এ বছর আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টা থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত লক্ষ্মী দেবীর পূজার অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলার মদনপাড়া গ্রামের মহাদেব পাল বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর বাজার অন্তত ৫০টি স্থানে প্রায় দুই শত বছর ধরে লক্ষ্মী প্রতিমার হাট বসে। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা এসব হাটে প্রতিমা বিক্রি করেছেন। আমরাও প্রতিমা তৈরী করে এসব হাটে বিক্রি করি। এখানে প্রতিটি হাটে আমাদের নির্মিত প্রতিমা বেশ বিক্রি হয়। এ থেকে আমরা আয় করি। এ অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণেই প্রতিটি হাটেই প্রতিমার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উপজেলার তারাকান্দর গ্রামের গৃহবধূ সুষমা রায় বলেন, আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ঘরে ঘরে লক্ষ্মীদেবীর পূজা করি। লক্ষ্মী দেবী তুষ্ট হলে ধন, সম্পদ ও ফসলে ধরণী পূরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সংসারের অভাব অনটন দূর হয়। সন্তান-সন্ততি নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারি। তাই আমরা এ পূজা করি।
তারাশী গ্রামের সুজয় সাহা বলেন, ঘাঘর বাজারের প্রতিমার হাটে প্রচুর প্রতিমা বিক্রি হয়। আমরা বংশ পরম্পরায় এসব হাট থেকেই প্রতিমা কিনে আসছি। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।
হিরণ গ্রামের বিকাশ পাল বলেন, রং, মাটি ও অন্য জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরকে এ বছর একটু বেশি দামে প্রতিমা বিক্রি করতে হচ্ছে।

সাংবাদিক রতন সেন কংকন বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলায় সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। উপজেলার সনাতনীদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ পূজাকে কেন্দ্র করে ৪-৫ দিন আগে থেকে প্রায় ৫০টি স্থানে লক্ষ্মীপ্রতিমার হাট বসে। সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রতিমা কেনাবেচা করেন। কোটালীপাড়ার ঐতিহ্যবাহী এ সব প্রতিমার হাটগুলো কালের সাক্ষী হয়ে শতাধিক বছর ধরে টিকে আছে।