ফোনে তাপসকে শেখ হাসিনা : আমি বলছি যা যা পোড়াতে...

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে হামলা, গুলিবর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন প্রসিকিউর তানভীর হাসান জোহা।
আজ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ জবানবন্দি দেন প্রসিকিউর তানভীর হাসান জোহা। এ নিয়ে এ মামলায় ৫১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
এদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস, ঢাবির সাবেক উপাচার্য (ভিসি) মাকসুদ কামাল ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপের অডিও রেকর্ড আদালতে উপস্থাপন করা হয়। শেখ হাসিনা ও শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথন তুলে ধরা হলো—
তাপস : টু.. (ফোন রিং), তোমাকে যেটা বলছি সেটা করো।
শেখ হাসিনা : টু.. (ফোন রিং), হ্যালো
তাপস : জ্বি, সালামালাইকুম
শেখ হাসিনা : হ্যাঁ, ওয়ালাইকুম আসসালাম
তাপস : জ্বি
শেখ হাসিনা : বলো বাবা
শেখ হাসিনা : তুমি নরমাল ফোনে কল দেও, ইন্টারনেটের অবস্থা ভালো না
তাপস : নরমাল ফোনেই, নরমাল ফোনেই
শেখ হাসিনা : আচ্ছা, বলো বাবা
তাপস : জ্বি, সন্ত্রাসীরা তো বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় বিভিন্ন সময় ঘুরতেছে, এখন কোথায় কী আক্রমণ করে বলা যাচ্ছে না তো
শেখ হাসিনা : না, করতেছে, আমরা ওদের আবার ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর আবাহনী ক্লাবে কি আগুন দিয়েছে?
তাপস : এরা মনে হয় সচিবালয়ে তো আক্রমণ করেছে, আবাহনী ক্লাবেও
শেখ হাসিনা : কোথায়?
তাপস : সচিবালয়ে তো আক্রমণ করেছে, আপনি জানেন না?
শেখ হাসিনা : না
তাপস : হ্যাঁ, স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী তো ঐখানে আছে, সচিবালয়ে কয়েকবার ওরা আক্রমণ করছে, ওরা তো রাতে যদি আবার কোথাও কোথাও বিভিন্ন সংবেদনশীল বাসা-বাড়িতে আক্রমণ করে তাহলে তো ইয়ে হবে।
শেখ হাসিনা : রাতের বেলা সব ভিজিলেন্স থাকবে এবং এই এতদিন তো। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটু, আস্তে আস্তে অনেক জায়গায় গেদারিং ক্লিয়ার হচ্ছে।
তাপস : ওরা মনে হচ্ছে না ইয়ে করবে, রাতে মনে হয় ওদের আরও অনেক কিছু পরিকল্পনা আছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো আমাকে তাই বলল, আভাস দিল এবং আপনাকেও মনে হয় বলেছে কিছু। জ্বি, রাতে যদি সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ, না ইয়ে করবেন নাকি?
শেখ হাসিনা : কী করব?
তাপস : মানে সেনাবাহিনী দেবেন?
শেখ হাসিনা : বাবা, একটু চিন্তা করে কথা কইও
তাপস : জ্বি
শেখ হাসিনা : এটাই তাদের আকাঙ্ক্ষা
তাপস : বুঝতেছি, আমি টেকনিকেলি এটা বুঝতেছি। কিন্তু ওরা মনে হয়, ঐ পথে নেওয়ার জন্য ইয়ে করছে।
শেখ হাসিনা : দরকার নাই, ওটা দরকার নাই। আমি সেনাপ্রধানের সাথে কথা বলেছি, ওরা রেডি থাকবে ঠিক আছে, এখনতো আমরা অন্য ইয়ে করতেছি। ড্রোন দিয়ে ছবি নিচ্ছি আর হেলিকপ্টারে ইয়ে হচ্ছে, মানে কয়েক জায়গায়।
তাপস : তাহলে ঐ কিছু ছবি দেখে পাকড়াও করা যায় না রাতের মধ্যে
শেখ হাসিনা : সবগুলোকে এরেস্ট (গ্রেপ্তার) করতে বলেছি রাত্রে
তাপস : হ্যাঁ, পাকড়াও, পাকড়াও করলে ওদেরকে।
শেখ হাসিনা : না, ওটা বলা হয়ে গেছে, ওটা নিয়ে র্যাব, ডিজিএফআই, এনএএসআই সবাইকে বলা হয়েছে—যে যেখান থেকে যে কয়টা পারবা ধইরা ফেলো।
তাপস : জ্বি
শেখ হাসিনা : ওটা বলা আছে, আর যেখানে গ্যাদারিং (জমায়েত) দেখবে সেখানেই উপর থেকে। এখন উপর থেকে করাচ্ছি, অলরেডি শুরু হইছে কয়েকটা জায়গায়।
তাপস : জ্বি
শেখ হাসিনা : হইয়া গেছে
তাপস : জ্বি, জ্বি, মোহাম্মদপুর থানার দিকে মনে হয় ওরা যাচ্ছে। এটা আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলল।
শেখ হাসিনা : মোহাম্মদপুর থানার দিকে?
তাপস : হ্যাঁ
শেখ হাসিনা : ওখানে পাঠাইয়া দিক র্যাবকে
তাপস : জ্বি, তাহলে আপনার নির্দেশনা লাগবে, উনি এখনও মানে।
শেখ-হাসিনা : আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিছি এখন, এখন লেথাল উইপন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে।
তাপস : জ্বি, জ্বি
শেখ হাসিনা : ওটা বলা আছে, আমি এতদিন বাধা দিয়ে রাখছিলাম। ঐ যে স্টুডেন্টরা ছিল। ওদের সেফটির (নিরাপত্তা) কথা চিন্তা করে, তারপর তো ঐ...
তাপস : না, রাতে স্টুডেন্ট না। রাতে হলো ওরা সন্ত্রাসী।
শেখ হাসিনা : না, কী করছে তোমার, ঐ যে আমাদের রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের একটা বাচ্চা ছেলে, তার শিক্ষক তাকে ডেকে নিয়ে আসছে, শিক্ষক নাকি আবার শিবির করত, ওরা জানে না। তারপর সেই ছেলেটা মারা গেছে, তার বুকে মাত্র একটা গুলি, অথচ পুলিশ কোনো রিভলবার ব্যবহার করেনি।
তাপস : হ, জ্বি।
শেখ হাসিনা : এরকম ঘটনা তারা ঘটাইছে।
তাপস : জ্বি, আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ইয়ে করেন।
শেখ হাসিনা : সব জায়গায় আগুন। বিআরটি, বিটিআরসি বন্ধ করে দিছে, পোড়াইয়া দিছে, বিটিভি পোড়াইয়া দিছে, এখনতো ইন্টারনেট বন্ধ সব পোড়াইয়া দিছে, এখন চলবে কীভাবে?
তাপস : জ্বি, এটা ভালো হইছে, জ্বি।
শেখ হাসিনা : না, পোড়াইয়া দিছে। মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে। আমি বলছি—যা যা পোড়াতে… ও আমাদের সেতু ভবন পোড়াইছে।
তাপস : ওরা মনে হয়, রাতে আরও ব্যাপক আক্রমণ করবে
শেখ হাসিনা : হ্যাঁ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সেটা পোড়াইছে
তাপস : জ্বি, কারণ এই যে আমি ফিরলাম। আমি দেখলাম—রাস্তায় রাস্তায় ওরা বিভিন্ন জায়গায় ইয়ে করতেছে।
শেখ হাসিনা : কোন কোন জায়গায়?
তাপস : বনানীতেও। বনানী-গুলশানে তো সচারাচার করে না, কিন্তু বনানী-গুলশানে ওরা ইয়েতে চলে আসছে—কোথাও কোথাও ইয়ে করতে পারে। মুভমেন্ট আছে সব জায়গায়।
শেখ হাসিনা : ঠিক আছে, আমি দেখছি। তোমরা সাবধানে থেকো।
তাপস : জ্বি, আমি সাবধানে আছি, জ্বি।
শেখ হাসিনা : তোমরা সাবধানে থেকো।
তাপস : জ্বি, আমি সাবধানে আছি।
শেখ হাসিনা : আচ্ছা।
তাপস : ধরপাকড় করতে হবে। সব ধরে ফেলতে হবে রাতের মধ্যে।
শেখ হাসিনা : না, না ওটা বলে দেওয়া আছে অলরেডি। আর একটু, আর একটু রাইত গাঢ় হলেই শুরু হবে।
তাপস : জ্বি, জ্বি
শেখ হাসিনা : অন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি
তাপস : জ্বি, জ্বি
শেখ হাসিনা : আচ্ছা
তাপস : সালামালাইকুম