সংখ্যানুপাতিক ভোট ব্যবস্থা হবে কিনা, নির্ধারণ করবে জনগণ : সালাহউদ্দিন

‘সংখ্যানুপাতিক ভোট ব্যবস্থা হবে কিনা তা জনগণ নির্ধারণ করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। আজ শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘অর্পণ আলোক সংঘের’ উদ্যোগে তারুণ্যের রাষ্ট্র চিন্তার তৃতীয় সংলাপ ‘মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আলোচনার টেবিল ও আন্দোলন—দুটি যদি একই ইস্যুতে হয় তাহলে এটা স্ব-বিরোধিতা। কেউ বলছেন পিআর চাই। পিআর যদি চাইতেই হয় সেটা তো ডিসাইড করবে জনগণ। আমরা কে, কয়টা দল রাস্তায় মিছিল করলাম, বিভাগীয় পর্যায়ে কে কয়টা সভা করলাম, হাজার দুই-তিনেক লোক নিয়ে মিছিল করলাম, তাতে কি পিআর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল?’
পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবিতে আন্দোলনরত দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আপনারা নির্বাচনি ইশতেহারে আপনাদের দাবিগুলো উল্লেখ করে নির্বাচনে আসুন। জনগণ যদি আপনাদের পক্ষে রায় দেয়, ইশতেহারের পক্ষে রায় দেয়, আপনারা সেটা বাস্তবায়ন করবেন। এটাই তো গণতান্ত্রিক রীতি।’
‘সংকট সৃষ্টি না করার’ আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি সব রাজনৈতিক দল এবং দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, আসুন আমরা আর কোনো সংকটের সৃষ্টি না করি, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। আমাদের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যে জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়েছে, সেটাকে আমরা সমুন্নত রাখি এবং এটাকে শক্তিতে পরিণত করে ইনশা-আল্লাহ আমরা গণতান্ত্রিক চর্চাকে অব্যাহত রাখতে পারব এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারব। তাহলেই আমরা সফলকাম হব একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে এবং আমাদের সব শহীদের স্বপ্নপূরণে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সরকারবিরোধী মনোভাব সবসময় জনগণের মধ্যে থাকে, যেকোনো ব্যর্থতার জন্য প্রথমেই সরকারের দিকে আঙুল তুলে—এজন্য সরকার দায়ী কিনা সেটা পরে বিবেচ্য, কিন্তু প্রথমে বলে সরকার দায়ী যেহেতু দায়িত্বে সরকার আছে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ইঙ্গিত করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘তাদের এই সরকারের দায়িত্বে আসাটা আমার মনে হয় সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি। তা না হলে আজ প্রেসার গ্রুপ হিসেবে তারা জাতির নির্দেশক হিসেবে একটি ভূমিকা রাখতে পারত, যেটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এখনও ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যারা সরকারে বসে আছে, প্রতিদিনই তাদেরকে লায়াবিলিটি কাঁধে নিতে হচ্ছে, হবে। যাই হোক, ওদেরকে আমি সরে আসার জন্য আহ্বান নিজেরা জানালে তো হবে না, তাগিদটা তাদের নিজেদেরই নিতে হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কালকে (শুক্রবার) কয়েকটা সমাবেশ হয়েছে বিভিন্ন বিভাগ পর্যায়ে। একটা পত্রিকায় আজকে হেডলাইন দেখলাম—কোথাও বলছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করবে, বিএনপি বিরোধী দলে যাবে। ভাই আপনারা নির্ধারণ করে দিয়েছেন—বিএনপি বিরোধী দলে যাবে নাকি তা জনগণ করবে। আমার জবাবটা এখানে সেরকম না। আমার জবাব হলো, আপনারা যখন এত বেশি কনফিডেন্ট, আত্মবিশ্বাসী যে সরকারি দল হবেন, তাহলে নির্বাচনে আসেন না কেন? আজকে এই বাহানা, কালকে ওই বাহানা, পরশু এই বাহানা দিয়ে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন কেন? উদ্দেশ্য কী সেটা তো আমরা জানি। সেটা আরও একটু কিছুদিন পরে বলব।’
প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “কাদেরকে নিয়ে আপনারা এখন যুগপৎ সঙ্গী হিসেবে আন্দোলন করছেন, সেটা জনগণ দেখছে। তাদের মধ্যে একটি দল আছে, আমি নাম নিলে অসুবিধা। ২০২৪ সালে ৭ জানুয়ারি ‘আমি-ডামি’ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। সাতটা দলের মধ্যে আপনারা নাম খুঁজে নেবেন।”
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “তারা যদি যুগপৎ সঙ্গী হয়ে নিষ্পাপ হয়, তাহলে বাকি ২৮টি দল, যারা ‘আমি-ডামি’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গী হয়েছিল তারা কি মহাপাপী? মানে আপনাদের সঙ্গী হলে তাদের কোনো পাপ নেই, এই নীতি সঠিক নয়। আর যারা ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়নি, কিন্তু তার আগের সব নির্বাচনে যারা ‘হাত পাকা’ দিয়ে বাতাস করেছে তারাও সঙ্গী হয়েছে। তাদের সম্পর্কে আমি বললাম বলে আমার ওপরে মহা আক্রমণ।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘একেক রকমের দাবি নিয়ে আন্দোলনে যেতে পারেন, সবার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। আমরা বলছিলাম—বিষয়গুলো এখনও আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তি হওয়ার অপেক্ষায়, সেজন্য অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করার জন্য কি আপনারা রাস্তায় গেলেন? সেই চাপকে আবার শূন্য করার জন্য আমাদেরকেও তো যেতে হবে রাস্তায় আন্দোলনে, সেটা কি আমরা এখন চাই? আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তি চাই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমরা চর্চার মধ্য দিয়ে আছি, রাজনৈতিক সংস্কৃতির সেই চর্চা করতে করতে আমরা এটাকেই ধারণ করব, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব জাতীয় ইস্যুতে, দেশের স্বার্থের ইস্যুতে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের ইস্যুতে, যেকোনো জাতীয় ইস্যুতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। গণতান্ত্রিক চর্চায় আমাদের মধ্যে বাহাস হবে, মতপার্থক্য হবে, বহুমত পোষণ করব, কিন্তু সেটার নিষ্পত্তি হবে আলোচনার টেবিলে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যদি কনস্টিটিউশনাল অর্ডার করেই এই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হয়, এখন থেকেই সেটার কার্যকর করতে হয়, তাহলে দেশে দুটি কনস্টিটিউশন বিরাজ করবে। তাহলে জুডিসিয়ারি কোনটা মানবে, প্রশাসন কোনটা মানবে?’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এই নৈরাজ্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক শূন্যতা যদি সৃষ্টি হয় তাহলে বেনিফিশিয়ারি কে হবে? যেকোনো অসাংবিধানিক শক্তি, বেনিফিশিয়ারি হবে পতিত স্বৈরাচার, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে আমরা রাষ্ট্রকে সেই জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি কেন? এই প্রশ্নগুলো আমি উত্থাপন করেছিলাম। আর রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স পাঠানোর এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। অ্যাপিলেট ডিভিশন তো প্রশ্ন করেনি, আপনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েছেন কিনা, পরামর্শ নিয়েছেন কিনা।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কারণ পরিস্থিতি সেরকম প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছে। অবৈধ হলেও তো প্রধানমন্ত্রী। তাকে খুঁজে নিয়ে এসে কি আর সেই সাজেশন নিয়ে রাষ্ট্রপতি পাঠানোর অবস্থায় ছিল? ছিল না। সেই জন্যেই আপিল বিভাগ সেই প্রশ্ন তোলেনি। কারণ আপিল বিভাগের সেই ক্ষমতা আছে সেই পরিস্থিতিতে ১০৬ এ বলা আছে কোন আইনি প্রশ্ন উত্থাপিত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বা বিষয়টি যদি এমন জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে সেই বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি তার কাছে রেফারেন্স পাঠালে সুপ্রিম কোর্টের কাছে সুপ্রিম কোর্ট সেটা বিবেচনা করে মতামত দিতে পারবে। সেটা ওখানেই বলা আছে সেই বিবেচনা নিয়ে ডক্ট্রিন অফসিটি অ্যান্ড সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অব স্টেট অ্যান্ড পিপল এই তিনটা ডক্ট্রিনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট সবসময় এই পরিস্থিতিগুলোতে জাজমেন্ট বা মতামত দিয়ে থাকে। তাই দিয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোনো দল কোনো দাবি করতেই পারে। সেটা জাতির ওপরে জবরদস্তি আরোপ করা সঠিক নয়। এখন এনসিপি দাবি করছে, গণপরিষদ এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনে একইসঙ্গে হওয়ার। সেই বিষয়টা আলোচনার টেবিলে আছে। ওখানেই আলোচনা হতে পারে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘যদি সবাই মিলে সম্মত হয়। যদি ঐক্যমত্ব পোষণ হয় সেটা হবে? যদি ঐক্যমত্য পোষণ না হয়। তাহলে যেভাবে প্রচলিত বিধি-বিধান সবাই সম্মত হবে সেভাবেই হবে। এখানে যেন আমরা পরস্পর জবরদস্তি না করি। যে পরিবর্তনগুলো আমরা সামনের দিনে আনতে চাচ্ছি, সেটা রাতারাতি হবে না। সেটার জন্য সময় দরকার, পর্যায়ক্রমে এভাবে যাওয়া দরকার একটা গণতন্ত্রবিহীন অবস্থা থেকে আমরা যে জায়গায় আসতে পেরেছি, ইনশাআল্লাহ এই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা একটা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারব, আমরা শহীদদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব, আমরা জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারব। আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা আছে—একটা বৈষম্যহীন, সাম্যভিত্তিক, ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার, সেই আকাঙ্ক্ষা আমরা পূরণ করতে পারব।’
অপর্ণ আলোক সংঘের সভানেত্রী বীথিকা বিনতে হোসাইনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুস সালাম, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র দলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামীম, এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।