বাধার মুখে স্থগিত বাঁকখালী নদী তীরের উচ্ছেদ অভিযান

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী তীরে পঞ্চম দিনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে স্থানীয়দের বাধার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে বুলডোজার। এ সময় সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে জ্বালানো হয় আগুন। এমন পরিস্থিতিতে অভিযান সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
আজ শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে নুনিয়ার ছড়া ও নতুন বাহারছড়া অংশে অভিযানে যায় বিআইডব্লিউটিএ। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনা সদস্য, পুলিশ, র্যাব বুলডোজার নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা বেশি দূর এগোতে পারেননি। এর আগেই আজ সকাল থেকে শহরের প্রধান সড়কের পাশাপাশি বিমানবন্দর সড়কে নেমে আসে শত শত স্থানীয় জনতা। এ সময় তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং শহরের বিমানবন্দর সড়কের মুখে ব্যারিকেড দিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সড়কে ঠেলা গাড়ি ফেলে তৈরি করা হয় প্রতিবন্ধকতা।
অভিযানে উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সেনা সদস্যরা অবরোধকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলাপ করেন। কিন্তু এর পরও তাদের সরানো যায়নি। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরা যানবাহনসহ আটকা পড়েন। এতে প্রধান সড়কের পাশাপাশি বিমানবন্দর সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রেখে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ জানান।
এমন পরিস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। পরে বুলডোজারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরে গেলে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেন রাজনৈতিক নেতারা। এরপর দুপুর ১২ টায় প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, উচ্ছেদ কার্যক্রম নিয়ে পুরো কক্সবাজারবাসীর মধ্যে আতঙ্কের পাশাপাশি নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এটা করা হচ্ছে কি না, তা এখন ভেবে দেখার বিষয়। এখানে নদীর তীর বলে উচ্ছেদ করা জায়গায় অনেক পুরোনো বসতি রয়েছে। যাদের খতিয়ান ও খাজনা দেওয়ার কাগজপত্রও রয়েছে। এসব পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
গত সোমবার, ২৯ আগস্ট শুরু হয় বাঁকখালী নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। প্রথম দুদিনে স্বাভাবিক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হলেও তৃতীয় দিন স্থানীয়দের বাধায় তা পণ্ড হয়। এরপর চতুর্থ দিন অভিযান পরিচালিত হয়। আজ পঞ্চম দিন বাধার মুখে আবারও অভিযান বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে অভিযানের দ্বিতীয় দিন পুলিশের ওপর হামলা এবং তৃতীয় দিনের প্রতিবন্ধকতার ঘটনায় পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএর পক্ষে দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৬৫০ জনকে।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে ৬ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। এ সময় দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিন্তু পরে তা আবারও দখল হয়ে যায়। উচ্ছেদ করা প্যারাভূমিতে ফের নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা।
এর মধ্যে বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ আগস্ট সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।