বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই তিস্তার পানি, উত্তরাঞ্চলে ফের বন্যার শঙ্কা

তিস্তা নদীর পানি আবারও বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে আসায় উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলা— রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শনিবার (৩০ আগস্ট) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, যেকোনো মুহূর্তে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বাড়তে পারে। বিশেষত, তিস্তা নদী লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় সতর্ক সীমায় প্রবাহিত হতে পারে। ফলে নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে পরবর্তী দুই থেকে তিন দিন নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মুস্তাফিজুর রহমান জানান, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে উত্তরের পাঁচ জেলায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। জেলাগুলোতে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে। এর ফলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
দুই সপ্তাহ আগে উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদী বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হয়েছিল। এর ফলে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ৩৪টি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। একইভাবে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীর কিছু এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার চরাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছিল।
তিস্তার নদীর নিম্নাঞ্চলে রোপা আমন ও সবজি খেত পানিতে ডুবে যায়। মৎস্যচাষিদের পুকুর থেকে মাছ ভেসে গিয়েছিল। এ ছাড়াও, নদীর পানি বাড়ায় গঙ্গাচড়া সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার অংশের ব্লক ধসে যায়। এতে করে ভাঙনের হুমকিতে পড়েছিল সেতু ও রংপুর-লালমনিরহাট মহাসড়ক।
বর্তমানে নদীর তীরবর্তী এলাকায় আমন আবাদের ভরা মৌসুম চলছে। আবার বন্যা হলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি আগামী তিন দিন পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে ও পরবর্তী দুই দিনে তা বাড়তে পারে। এ ছাড়া গঙ্গা নদীর পানি আগামী পাঁচদিন বৃদ্ধি পেতে পারে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি আগামী তিনদিন স্থিতিশীল থেকে পরের দুইদিন বৃদ্ধি পেতে পারে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, আজ শনিবার সকাল ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহের উচ্চতা ছিল ৫২ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমার ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। ফলে পানি বিপৎসীমার মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহের উচ্চতা ছিল ২৮ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার।