গাজিখালি নদীর ওপর গ্রামবাসীর অর্থ ও শ্রমে হচ্ছে সেতু

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় সরকারি সহায়তা না পেয়ে অবশেষে নিজেরাই সেতু নির্মাণে নেমেছে গ্রামবাসী। ধানকোড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কান্দাপাড়া ও কৃষ্ণপুর এলাকার মানুষের অর্থ ও শ্রমে গাজিখালি নদীর ওপর ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের এ সেতুর কাজ শুরু হয়েছে।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও এ স্থানে সেতু নির্মাণের দাবি পূরণ হয়নি। প্রতিটি নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি মিললেও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রোগী পর্যন্ত সবাইকে বর্ষাকালে বাঁশের সাঁকো কিংবা নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে স্থানীয়দের চাঁদার টাকায় সেতুর কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে পিলার নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে পাটাতন বসানোর প্রস্তুতি। এই কাজে গ্রামের তরুণ, প্রবীণ সবাই অংশ নিচ্ছে। স্থানীয় রাজমিস্ত্রি ও ইঞ্জিনিয়াররাও একসাথে কাজ করছে।
সেতু নির্মাণ তহবিলের ক্যাশিয়ার শরিফুল ইসলাম জানান, আমি দেখেছি বহুবার সরকারি লোকজন এসে মাপজোক করেছে, কিন্তু কাজ হয়নি। তাই আমরা আর অপেক্ষা করিনি—নিজেদের টাকায় কাজ শুরু করেছি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সেতুটি নির্মিত হলে সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ সদর, ঢাকা জেলার ধামরাইসহ চার ইউনিয়নের প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে। এতে শিক্ষার্থী, রোগী ও কৃষকদের যাতায়াত সহজ হবে এবং কৃষিপণ্য পরিবহণেও সুবিধা মিলবে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন আহমেদ বলেন, লক্ষাধিক মানুষ বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমরা নিজেরাই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল মিয়া বলেন, প্রতিদিন কলেজে যেতে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হতে হতো। অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে দীর্ঘপথ ঘুরতে হতো। এই সেতু আমাদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেবে।
ধানকোড়া ইউনিয়নের সাবেক সদস্য মন্টু জানান, সরকারি বরাদ্দ না পেয়ে হতাশ হলেও বসে থাকিনি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবেই আমরা এ কাজ হাতে নিয়েছি।
ইতোমধ্যে সেতুর নির্মাণকাজের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন স্থানটি পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, যেহেতু পিলারের কাজ শেষ হয়েছে, তাই উপজেলা প্রকৌশলীকে দিয়ে ডিজাইন অনুযায়ী পাটাতনের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি এবং উপজেলা প্রশাসন থেকেও বিধিমালা অনুযায়ী সহায়তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।