লাখো দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে মানিকগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ

মানিকগঞ্জ জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কালিগঙ্গা নদীতে দীর্ঘ এক যুগ পর অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। যার প্রতিপাদ্য ছিল, “নদী দূষণ রোধ করি, নির্মল বাংলাদেশ গড়ি।”
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বেউথা ব্রিজ সংলগ্ন নদীর দুই পাড় ও আশেপাশের এলাকায় লাখো নারী-পুরুষের উপচেপড়া ভিড় জমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানিকগঞ্জসহ আশেপাশের ছয়টি জেলা থেকে আগত মানুষ নৌকাবাইচ উপভোগ করেন। নদীতে শুধু নৌকার ‘হেইয়ো হেইয়ো’ শব্দ শোনা যায়।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াছমিন খাতুনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
নৌকাবাইচে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২৯টি নৌকা অংশ নেয়। চারটি রাউন্ড শেষে ফাইনালে পাবনা জেলার সাঁথিয়ার সালেক মেম্বারের নেতৃত্বাধীন শেরে বাংলা ভিটেপাড়া দল চ্যাম্পিয়ন হয়। বিজয়ী দলকে ট্রফি ও একটি মোটরসাইকেল পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা এবং জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা চ্যাম্পিয়ন দলকে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রায় শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতা গত ১২ বছর ধরে বন্ধ ছিল। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও এ আয়োজন হওয়ায় দর্শনার্থীরা জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান এবং এ ধরনের উদ্যোগকে “হাজার বছরের ঐতিহ্য রক্ষার কবচ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
৬৫ বছর পর বাইচ দেখছেন বলে জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি ঢাকা থেকে নৌকাবাইচ দেখতে মানিকগঞ্জ এসেছেন। তার বাড়ি জেলার হরিরামপুর উপজেলায় ছিল।
চ্যাম্পিয়ন দল পাবনার সাথিয়া উপজেলার শেরে বাংলা ভিটেপাড়া বাইচের নৌকার মালিক সালেক মেম্বার বলেন, আমরা অনেকগুলো প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এবার মানিকগঞ্জেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় খুবই ভালো লাগছে।
জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “নদী দূষণ রোধ করি, নির্মল বাংলাদেশ গড়ি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আনন্দঘন পরিবেশে লাখ লাখ মানুষ বাইচ উপভোগ করেছেন।
বাইচ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত ট্রলার, লঞ্চ ও সড়ক পথে প্রায় দুই লাখ দর্শনার্থী ভিড় জমায় বেউথা এলাকায়। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে কালিগঙ্গা নদীর দুই তীর।