অনাগত সন্তানের পিতৃত্বের দাবি চাইছেন রোজিনা

অসহায় এক নারী রোজিনা বেগম (৩০)। কাছের আপনজন বলতে তেমন কেউ নেই তার। বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগেই। ছোট্ট একটি ভাড়াবাসা নিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই অসহায় নারীর ওপর কুনজর পড়ে বাড়ির মালিকের ছেলে শামীমের। গভীর রাতে নারীর ঘরে প্রবেশ করে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। সেই থেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন রোজিনা। বিষয়টি আশপাশের লোকজনকে জানাতে চাইলে বিয়ের আশ্বাসে চুপ করিয়ে দেয় অভিযুক্ত পরিবার। এভাবে কেটে যায় নয় মাস। কিন্তু সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসতেই নানা অপবাদে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড প্রসববেদনায় কাতর হয়ে একা অটোরিকশায় করে পৌঁছান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে প্রসব বেদনা শুরু হলে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। ভুক্তভোগী রোজিনা বেগম ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার গামারীতলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শ্রীপুর পৌরসভার বেতঝুড়ি গ্রামের অভিযুক্ত শামীমের (৩০) বাড়িতে ভাড়া থেকে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন।
রোজিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মা-বাবা কেউ নেই। জীবিকার জন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করি। ভাড়া বাসায় একা থাকতাম। প্রায় নয় মাস আগে রাতে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগে অভিযুক্ত শামীম ঘরে প্রবেশ করে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে। আমি চিৎকার করলে মুখ চেপে ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যায়। কিছুদিন পর বুঝতে পারি আমি অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি জানালে শামীমের বাবা-মা বিয়ের আশ্বাস দেন। কিন্তু পরে তারা আর রাজি হননি। থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। এখন আমি সন্তানসম্ভবা। প্রসব বেদনায় কষ্ট পাচ্ছি।’
স্থানীয় এক নারী পাপিয়া জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে সিঁড়িতে রোজিনা প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছিলেন। পরে তিনি এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করেন এবং চিকিৎসকদের খবর দেন।
অভিযুক্ত শামীমের মা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার ছেলে ভুল করেছে। সমাধানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু করতে পারিনি।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী নারীকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কারণ, শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ধরনের অপারেশনের সুবিধা নেই।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তদন্ত শেষে মামলায় তাকে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছিল। তবে তিনি সময় নিচ্ছেন। এ মুহূর্তে মৌখিক অভিযোগ করলেও মামলা দায়ের করা হবে।