একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে : মির্জা ফখরুল

দেশে একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের কথা বারবার স্মরণ করতে চাই। এজন্য চাই যে, ১৯৭১ সাল আমাকে একটা স্বাধীন দেশ দিয়েছিল, ভূখণ্ড দিয়েছিল, আমাকে একটা স্বাধীন সত্ত্বা দিয়েছিল এবং সে জন্য আজ আমার অস্তিত্ব আছে, আমি টিকে আছি। আমি স্মরণ করতে চাই, ২৪-এর জুলাই-আগস্টের শহীদদেরকে। কারণ তারা আমাদেরকে একটা গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই দুইটা জিনিসই আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আজকে একটা প্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা আছে একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার। এটার বিরুদ্ধে কিন্তু বাংলাদেশের সব নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ২৪-এর জুলাই-আগস্ট যেভাবে সত্য, ঠিক একইভাবে সত্য কিন্তু একাত্তরের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন কে? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে একটা নতুন করে কথা উঠছে, ষড়যন্ত্র চলছে যে বাংলাদেশে এখান এক ধরনের উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এই উগ্রবাদকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। তাহলে আমাদের বাংলাদেশের যে আত্মা, যে সোল, সেই অস্তিত্ব রক্ষা পাবে না। এই কথাটা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমি কথাটা আজ এজন্য আরও বেশি করে বলছি যে, এখানে আপনাদের সবাইকে, বিভক্তি-বিভাজনের রাজনীতি কেউ করবেন না। অতীতে যা হয়েছে, হয়েছে। এখন বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য, বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখার জন্য, বাংলাদেশকে সামনে নেওয়ার জন্য, বাংলাদেশকে আরও উন্নত করার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্মানে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান হয়। বিকেল সোয়া ৪টা লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা উলুধ্বনি ও ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং তারেক রহমান হাত নেড়ে অভিবাদনের জবাব দেন।
‘ব্যাংককে বাড়ি ভাড়ার ধুম, ওরা গাড়ি কিনছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, বিগত ১৫ বছর যারা আমাদেরকে ভুল বুঝিয়ে, আমাদের ভোট নিয়ে আমাদেরকে শাসন করেছেন, তারা ১৫ বছর আমাদেরকে বন্ধু হিসেবে মনে করেননি। তারা প্রজা হিসেবে আমাদের ওপর অত্যাচার করেছেন, নির্যাতন করেছেন, আমাদের পুরো দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন আগে চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলাম। ব্যাংককে গিয়ে আমি আমার বন্ধুদের কাছে শুনলাম যে, এখন ব্যাংককে সবচাইতে যে অভিজাত এলাকা সেই অভিজাত এলাকাগুলোতে বাড়ি ভাড়ার ধুম পড়ে গেছে। সেই বাড়িগুলো ভাড়া করছেন সব আওয়ামী লীগের বিতাড়িত নেতারা। তারা যে গাড়ি কিনছেন, সেই গাড়িগুলো কোনোটাই ২ কোটি ৩ কোটি টাকার কমে নয়। এসব টাকা কোত্থেকে গেল? এই দেশের সম্পদ তারা পাচার করেছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা সবাই জানেন, নতুন করে বলতে চাই না। শুধু এইটুকু বলতে চাই যে, আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। প্রায় 88 লাখ কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ বলতে আর কিছু নেই, সব পাচার হয়ে গেছে। আমাকে একজন অর্থনীতিবিদ জিজ্ঞেস করছিলেন, দেখে-শুনে তো মনে হচ্ছে যে এরপর তোমরাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে, জনগণ তোমাদের উপরে আস্থা রাখবে। তো, তোমরা দেশ চালাবে কোত্থেকে? কারণ টাকা তো সব পাচার হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমাদের দেশের অর্থনীতির অবস্থা কী করুণ করেছে সেই জিনিসটাই শুধু আমি আপনাদেরকে বললাম।
অসাম্প্রদায়িক ‘রেইনবো রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠাই বিএনপি তথা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লক্ষ্য উল্লেখ করে ‘আগামীর বাংলাদেশ’ গঠনে সবাইকে ঐক্য হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘নির্বাচন বানচাল হতে দেওয়া হবে না’
গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, কোনো শক্তি, কোনো ষড়যন্ত্রকারী, সেটা দিল্লিতে হোক আর কলকাতায় হোক বা বাংলাদেশের মাটিতে হোক, কোনো ষড়যন্ত্রকারীকে আমরা সহ্য করব না। সঠিক সময়েই এই নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, জুলাই সনদের নামে নানারকম চক্রান্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে কয়েকটি দল, তাদের উদ্দেশে আমরা হুশিয়ার উচ্চারণ করছি, জুলাই সনদ হবে সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে। আপনি নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র করে দেশকে ভিন্ন অবস্থানে নিয়ে যাবেন না।
গণফোরামের সভাপতি বলেন, নতুন প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের ৩১ দফা যেটা দিয়েছেন, আমি বলি, এটাই হচ্ছে আমাদের জাতীয় সনদ। এর ভিত্তিতে আগামী বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।
তিনি বলেন, আজকে রামু থেকে শুরু করে গঙ্গাচড়া পর্যন্ত কোনো একটি ঘটনার বিচার হয় নাই। আগামীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার দেশের মাটিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং ধর্ম বিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অপর্ণা রায় দাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য রনেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুণ রায় চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তপন চন্দ্র মজুমদার, এসএন তরুণ দে, মিল্টন বৈদ্য, পূজা উদযাপন ফ্রন্টের জয়দেব জয়, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত চক্রবর্তী, ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত দেব, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ইনকনের প্রভু বিমলা প্রসাদ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল বারী ড্যানি, জন গোমেজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।