ভোটার হতে প্রবাসীদের পাসপোর্ট লাগবে না

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করতে বদ্ধপরিকর সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এ প্রক্রিয়া বেশ জটিল। এ জটিলতা নিরসনে ভোটার হওয়ার নিয়মে বড় পরিবর্তন এনেছে ইসি। এখন থেকে প্রবাসীদের ভোটার হতে আর বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক থাকছে না।
নির্বাচন কমিশনের সংশোধিত এসওপি অনুযায়ী, তিনজন এনআইডিধারী প্রবাসীর প্রত্যয়নপত্রসহ নির্ধারিত কিছু কাগজপত্র জমা দিলেই প্রবাসীরা ভোটার হতে পারবেন। গতকাল মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) ইসির এনআইডি অনুবিভাগ থেকে এই নতুন নিয়ম জারি করা হয়। এতে সই করেছেন অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) খান আবি শাহানুর খান।
নতুন নিয়মে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে, পূরণ করা আবেদনপত্র (ফরম-২ক), জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন যাচাইকৃত কপি, রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি, পাসপোর্টের কপি (যদি থাকে) এবং তিনজন প্রবাসী এনআইডিধারীর প্রত্যয়নপত্র। এগুলোর মধ্যে আবেদনপত্র, জন্মসনদ, ছবি ও তিন এনআইডিধারীর প্রত্যয়নপত্র বাধ্যতামূলক।
পাশাপাশি, আরও কিছু দলিলাদিও প্রয়োজন হতে পারে। যেমন—আবেদনকারীর পিতা-মাতার এনআইডি অথবা জন্মসনদ/মৃত্যুসনদ, বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সনদ, শিক্ষা সনদ (যেমন—এসএসসি/সমমান), ড্রাইভিং লাইসেন্স, টিআইএন সার্টিফিকেট, বিবাহ সনদ, স্বামী বা স্ত্রীর এনআইডি, হোল্ডিং ট্যাক্স বা ইউটিলিটি বিলের কপি ইত্যাদি। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এসব জমা দিতে হবে।
এ ছাড়া যেসব প্রবাসী ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে ঘোষিত চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৬টি উপজেলা বা থানার অন্তর্ভুক্ত, তাদের জন্য একটি বাড়তি ‘বিশেষ তথ্য ফরম’ পূরণ করতে হবে।
এসওপিতে আরও বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরাসরি নিবন্ধন কেন্দ্রে জমা দেওয়া যাবে। তবে কেউ যদি দেশের বাইরে থাকেন, তাহলে তার পক্ষে একজন প্রতিনিধি বাংলাদেশে থেকে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসারের কাছে সেসব কাগজ জমা দিতে পারবেন।
নতুন এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন একাধিক দেশে মিশন অফিসে কার্যক্রম চালু করেছে। এসব মিশনে কারিগরি ও প্রশাসনিক সহায়তা দিয়েছে ইসির নিজস্ব টিম। মিশনগুলোতে যন্ত্রপাতি বসানো, নেটওয়ার্ক স্থাপন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভাও করা হয়েছে। এসব কাজ শেষে শুরু হয়েছে এনআইডি পার্সোনালাইজেশনের ‘টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল’ কার্যক্রম।
ইতোমধ্যে নয়টি দেশের ১৬টি মিশনে এ সেবা চালু রয়েছে। দেশগুলো হলো—সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। চলতি বছরের জুলাই মাসে দশম দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে জাপান। আগামীতে আরও ৪০টি দেশে এই সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময় থেকেই প্রবাসীদের এনআইডি এবং ভোটার হওয়ার দাবির সূত্রপাত। ২০১৯ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে ইসি। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে আবারও কিছু দেশে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় তা আবার থমকে দাঁড়ায়। সর্বশেষ কমিশন পরিবর্তনের পর নতুন নেতৃত্বে আবারও প্রবাসী এনআইডি কার্যক্রমে গতি এসেছে। বর্তমানে দায়িত্বে থাকা এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশনের অধীনে ফের সচল হয়েছে উদ্যোগটি।