প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে না পারলে জলবায়ু ঝুঁকি আরও বাড়বে

দেশে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ আকারে বাড়ছে প্লাস্টিকের বর্জ্য। এতে পরিবেশ, খাদ্য, স্বাস্থ্য, পরিবহণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার লাভ করছে। এজন্য পরিবেশবিদ ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট ফোরাম পরিবেশ, তথা জলবায়ু রক্ষায় বহুমুখী উদ্যোগের পাশাপাশি প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে গুরুত্ব আরোপ করছে।
প্লাস্টিকের ব্যবহারের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে অবস্থা আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বোতল ও পলিথিনের উপস্থিতি গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলে বেশি লক্ষ্য করা যায়। এটির প্রভাব কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা চারপাশে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। রাজধানীর ড্রেনগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্য অপচনশীল হওয়ার ফলে পানি চলাচলে বাধা হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্লাস্টিকের বিকল্প কিছু ব্যবস্থা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এই সমস্যা রয়েই যাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে ঢাকার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে হচ্ছে। পার্ক ও লেক, রাস্তার ধার, নদী ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্যের অবস্থান দেখা যায়। ঢাকা শহরে প্রতিদিন এক কোটি ৩০ লাখের বেশি পলিব্যাগ বর্জ্য বিভিন্ন লেক, ঝিল, পুকুর, ডোবা, নালা ও নদীতে গিয়ে জমা হচ্ছে। এতে করে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকাতে আয়তনের তুলনায় বিপুল পরিমাণে জনসংখ্যা হওয়ায় প্লাস্টিকের ব্যবহারও বেশি। তাছাড়া অধিকাংশ স্থানে বর্জ্যের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় অনেকেই ফেলছে যেখানে সেখানে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত একটি দেশ। প্লাস্টিকের মতো বর্জ্য বাংলাদেশের ঝুঁকি আরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।
যত্রতত্র নির্বিচারে পলিথিন ব্যবহার চলছে। প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উন্মুক্ত জায়গায় ফেলা হচ্ছে। এ ধরনের দূষণ বন্ধ করতে হলে প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করা জরুরি।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, প্রতিদিন ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় আট হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এগুলোর মধ্যে প্লাস্টিকের বর্জ্য থাকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। এসব বর্জ্যের ফলে অধিকাংশ জায়গায় পানি প্রবাহে বাধা তৈরি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, প্লাস্টিক মফস্বল এলাকার চেয়ে শহরগুলোতে জলাবদ্ধতার তৈরি করে। মাটির উর্বরতা নষ্ট করার জন্য প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি দায়ী। প্লাস্টিক বাতাসকে দূষণ করে ও পানিকে দূষণ করছে। এর কারণে মাটির উর্বরতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বেশি ক্ষতি করছে একক ব্যবহারের বর্জ্য। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ওয়ান টাইম গ্লাস ও প্লেট, পলিথিন এবং প্যাকেজিংয়ের বর্জ্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এসব বস্তু ব্যবহারে আমাদের বেশি সচেতন হতে হবে। তাছাড়া রিসাইকেলিং করার চিন্তা করতে হবে।
ড. মনিরুজ্জামান বলেন, পরিবেশ বাঁচাতে এখন আমাদের যত দ্রুত সম্ভব সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার এড়িয়ে বিকল্প পণ্য ব্যবহারে নতুন উদ্ভাবনের দিকে ঝুঁকতে হবে। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে আমরা যদি কাপড়ের, কাগজের, পাটের ও পাতার কিছু তৈরি করতে পারি, তাহলে এটির ব্যবহার কমানো সম্ভব।
সম্প্রতি ঢাকার মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেট পরিদর্শনকালে এক অনুষ্ঠানে পলিথিনের ব্যবহার প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, প্লাস্টিক বা পলিথিনের কোনো উপকারিতা নেই। এসবের জন্য আমাদের মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া অনেক সময় পানি আটকে যায় পলিথিনের জন্য। এটি সহজে নষ্টও হয় না।
মন্ত্রী বলেন, সবাই যদি পলিথিন বন্ধ করে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করে, তবে কৃষক লাভবান হবে। পরিবেশের পাশাপাশি জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত থাকবে। তিনি এসময় সবাইকে প্লাস্টিক বা পলিথিনের বিকল্প পাটের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ করেন।