ট্রাইব্যুনালে মাথার পেছনের গুলিবিদ্ধ অংশ দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাক্ষী

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলার ঘটনায় করা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষীর জবানবন্দিতে গুলিতে আহত আব্দুস সামাদ বলেন, ‘পুলিশ আমাকে গুলি করলে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অপারেশন করে আমার মাথার পেছন থেকে লম্বা একটি বুলেট বের করা হয়।’ এ সময় সাক্ষী তার মাথার পেছনের গুলিবিদ্ধ অংশ ট্রাইব্যুনালকে দেখান এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আজ রোববার (১৭ আগস্ট) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর জবানবন্দি দেন আহত আব্দুস সামাদ। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জবানবন্দিতে সাক্ষী বলেন, ‘আমার নাম আব্দুস সামাদ। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ২৪ বছর। আমার ঠিকানা : গ্রাম- ২নং জুগলি নয়াপাড়া, থানা- হালুয়াঘাট, জেলা- ময়মনসিংহ। বর্তমান ঠিকানা : ফুলবাড়ীয়া, রোড নং ১, সেক্টর ১০, উত্তরা, ঢাকা।
আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমি ভ্যান গাড়িতে সবজি বিক্রি করি। আমি একজন জুলাই যোদ্ধা। আমি ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখ (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে উত্তরা আজমপুর বিএনএস সেন্টারের সামনে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। পুলিশ আমাদের ওপর গুলি ছুড়তে থাকলে আমরা যে যার মতো পালাতে থাকি। পুলিশ আমাদেরকে ধাওয়া করে গুলি করে। একটি গুলি আমার মাথার পেছনে এসে লাগে। আমি মাটিতে পড়ে গেলে আন্দোলনকারীরা আমাকে কাছের একটি ছোট হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
‘সেখান থেকে আমাকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেলে পাঠানো হয়, যা বাংলাদেশ মেডিকেল নামে পরিচিত। সেখানে নেওয়ার পর রাত ৮টার দিকে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। সেখান থেকে আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেলে আমি পাঁচ দিন ভর্তি ছিলাম। আমার ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছিল না। আমাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়। আমি বাসায় যাই। আমি ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারতাম না। দূরের জিনিস ঝাপসা দেখতাম। বাসায় চার-পাঁচ দিন ছিলাম। রাতের বেলায় আমার কাঁপুনি জ্বর আসত। তারপর আমি আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই’, যোগ করেন আব্দুস সামাদ।
সাক্ষী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমাকে সেখানে স্যালাইন ও ইনজেকশন দিতো। ডাক্তার আমাকে জানায়, আমার মাথায় একটি ছোট বুলেট আছে। অপারেশন লাগবে না ওষুধে ভালো হয়ে যাবে। ঢাকা মেডিকেল থেকে আমাকে আনুমানিক ১০ দিন পর রিলিজ দেওয়া হয়। তখন আমি দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে চলে যাই। বাড়িতে পাঁচ-ছয় দিন থাকা অবস্থায় আমার শরীরের বাম অংশ ঝিনঝিন করত।’
আব্দুস সামাদ আরও বলেন, ‘আমি ৫ আগস্টের পর আবার ঢাকায় আসি। আমার মা যে বাসায় কাজ করত, সে বাসার গৃহকর্তার সাহায্যে আমি ঢাকা ইবনে সিনা হাসপাতাল, কল্যাণপুরে ভর্তি হই। সেখান থেকে আমাকে ইবনে সিনা (শংকর) ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমার অপারেশন হয়। অপারেশন করে আমার মাথার পেছন থেকে লম্বা একটি বুলেট বের করা হয়।’ এ সময় সাক্ষী তার মাথার পেছনের গুলিবিদ্ধ অংশ ট্রাইব্যুনালকে দেখিয়ে বলেন, ‘বুলেটটি আমাকে দেওয়া হয়। দেড় মাস ভর্তি থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি আসি। এই সেই বুলেট (বস্তু প্রদর্শনী-111)।’
‘আমি শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (আসাদুজ্জামান), পুলিশের আইজির (মামুন) শাস্তি চাই। কারণ তাদের নির্দেশে পুলিশ আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। বিবিসি, আল-জাজিরাসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত সংবাদ ও আলোচনায় এটা দেখেছি ও শুনেছি। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এটি আমার জবানবন্দি।’