হাসিনার আইনজীবী হতে চান পান্না, আদালত বললেন—ট্রেন ছেড়ে গেছে ওঠার সুযোগ নেই

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে আইনজীবী হতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন আলোচিত-সমালোচিত আইনজীবী জেড আই খান পান্না। জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে, এখন ওঠার সুযোগ নেই।
আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ জেড আই খান পান্নার পক্ষে আইনজীবী নাজনীন নাহার এ আবেদনটি শুনানি করেন।
মতিঝিল শাপলা চত্বরে গনহত্যার মামলার শুনানির পর জিয়াউল আহসানের আইনজীবী নাজনীন নাহার আদালতকে বলেন, মাই লর্ড ট্রাইব্যুনালে চলমান আরেকটি মামলার আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে আইনজীবী হতে চান সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
এ সময় প্রসিকিউটরদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়, এ মামলায় দুই আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের পক্ষে আইনজীবী হওয়ার সুযোগ নেই। আর দুই পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন রয়েছেন।
জবাবে আইনজীবী নাজনীন নাহার আদালতকে বলেন, মাই লর্ড এ সিনিয়র আইনজীবী ইতিপূর্বে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছিলেন। রেজিস্ট্রার বলেছিল, আদালতের অনুমতি লাগবে। পরে তিনি আর মুভ করতে পারেননি।
জবাবে বিচারক বলেন, এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এসে এমন আবেদনের উদ্দেশ্য কী? আদালত বলেন, ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর স্টেশন মাস্টারকে বলে ট্রেনে ওঠার সুযোগ নেই।
গত ২৫ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর সাবেক বিশেষ পিপি আইনজীবী আমির হোসেনকে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। তিনি ইতোমধ্যে পাঁচ সাক্ষীকে জেরা করে শুনানি করেছেন।
পরে ট্রাইব্যুনাল জেড আই পান্নার আবেদন আমলে নেননি।
জুলাই আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে গত ১ জুন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনেন।
অভিযোগগুলো হলো—
প্রথম. গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের রাজাকারের বাচ্চা ও রাজাকারের নাতিপুতি উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।
দ্বিতীয়. হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন। গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুজনের সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
তৃতীয়. রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চতুর্থ. রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনার পাশাপাশি ওই দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পঞ্চম. শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায়ও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২ জুলাই আদালত অবমাননার একটি মামলায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটিই প্রথম কোনো মামলা, যেখানে হাসিনার কারাদণ্ড হয়েছে।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন তাজুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম ও মিজানুল ইসলাম। শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন শুনানি করেন।