শিগগিরই আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে : তারেক রহমান
বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐকবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আর এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অতি শিগগিরই আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে।
আজ রোববার (১০ আগস্ট) বিকেলে রাজশাহী মহানগর বিএনপি আয়োজিত সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
আওয়ামী সরকারের ১৭ বছরের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমাদের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতন করে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত করে রেখেছিল। এই স্বৈরাচার বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছিল। কয়েক লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জর্জরিত করে রেখেছিল। শুধু বিএনপি নয়, বিরোধী সব রাজনৈতিক দল—যারা রাজপথে ছিল তাদেরও চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। রাজনীতির বাইরেও সাধারণ মানুষ সরকারের সমালোচনা বা প্রতিবাদ করলে তাদেরও নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা—স্থানীয় বা জাতীয় সবই ধ্বংস করে দিয়েছিল। লুটপাট করে মেগা প্রকল্প উন্নয়নের নামে মেগা লুটপাট করা হয়। বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা—সব ধ্বংস করে দিয়েছিল।’
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সমন্বয়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপির বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমির, দলের বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চন্দন, নগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুন ও সাবেক কাউন্সিলর আনসার আলী।
যুবদল নেতা শরিফুল ইসলাম জনির সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ, নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, যুগ্ম আহ্বায়ক শাফিকুল ইসলাম শাফিক, যুগ্ম আহ্বয়ক বজলুর রহমান মন্টু, নগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহাফুজুর রহমান রিটনসহ অন্যান্যরা। মুহুর্মুহু করতালি আর স্লোগানের মধ্য দিয়ে তারেক রহমান অনলাইনে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে সম্মেলনে যুক্ত হন।
রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সমন্বয়কারী আব্দুস সালাম তার বক্তৃতায় বলেন, নেতা (তারেক রহমান) আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন রাজশাহী বিএনপির রাজনীতিকে সুদৃঢ় করতে। তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন, রাজশাহী আমার বিভাগ। আপনাকে আমার দলের দায়িত্ব নিতে হবে। আমি আমার নেতার কথামতো দায়িত্ব পালন করেছি। এখন থেকে রাজশাহীর বিএনপিতে কোনো বিভাজন থাকবে না ইনশাল্লাহ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতাদের বক্তব্য আগ্রহসহ শোনেন। এরপর তিনি সম্মেলনে উপস্থিত উল্লসিত নেতাকর্মী ও জনগণের প্রতি হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। তিনি ৫টা ২০ মিনিট থেকে ৫টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ২৫ মিনিটের বক্তব্যে আরও বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে স্বৈরাচার দেড় মাসের ব্যবধানে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছে। অসংখ্য মানুষ দৃষ্টি হারিয়েছে। আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সরাসরি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের উদ্দেশ্য, আমরা আল্লাহর রহমতে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারকে উৎখাত করতে পেরেছি। এখন আমাদের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার। লক্ষ করছি, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষণা হয়েছে। আগামী বছর রমজানের পূর্বেই হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের প্রথম অধিকার প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে। আপনারা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যখন জনগণের কাছে যান তখন বাংলাদেশের মানুষ জানতে চায় দেশের জন্য কী করবেন, দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে। এজন্য জনগণের আস্থা অর্জনে জনগণের সঙ্গেই থাকতে হবে। আগামী নির্বাচনে অধিকাংশ মানুষ ধানের শীষকেই বেছে নেবে।’ এ সময় তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের তরুণদের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্যই হোক।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘শুধু নির্বাচন হলেই হবে না, নির্বাচন পরবর্তী দেশ পুনর্গঠনে যুবসমাজকে মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। অর্থনীতির পুনর্গঠন, খাদ্য উৎপাদন ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি ৭৪-৭৫ সালের দুর্ভিক্ষ, সেই দুর্ভিক্ষে মানুষ ডাস্টবিনে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন বাঁচিয়েছে। শহীদ জিয়া ক্ষমতায় এসে দুর্ভিক্ষ দূর করে খাদ্য উৎপাদন করে স্বয়ম্ভর হয়েছেন। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি করেছেন।’ এ সময় তিনি তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমলের বিস্তারিত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
ফারাক্কার কুপ্রভাবের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের এক-চতুর্থাংশ মরুভূমির দিকে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে। আমাদের নিজেদের খাল খননের ওপর জোর দিতে হবে এবং পানি মজুত করে রাখতে হবে। আমাদের শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে মানুষ স্বল্প সময়ে বিচার পায়।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জোর দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজকের এই কাউন্সিলের মাধ্যমে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং দেশের মানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’ সর্বশেষে তিনি অতি শিগগিরই দেশে ফিরে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘ইনশাল্লাহ, অতি শিগগিরই আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে।’