শাপলা প্রতীক চেয়ে ফের ইসিকে চিঠি এনসিপির
নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। যা প্রায় চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা বরাদ্দ না করে এনসিপিকে ৫০টি প্রতীকের তালিকা দিয়ে সেখান থেকে একটি বেছে নিতে বলা হয়। কিন্তু এনসিপি শাপলা প্রতীকই চায়। সেজন্য ইসির কাছে ফের ‘শাপলা’ চেয়ে চিঠি দিয়েছে দলটি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইসির দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপি তাদের দলীয় অবস্থান লিখিতভাবে সিনিয়র সচিব বরাবর অবহিত করেছে।
আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠি ইমেইলে ইসির সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছে দলটি।
চিঠিতে এনসিপি বলেছে, গণমানুষের সঙ্গে শাপলা প্রতীক কেন্দ্রিক গভীর সংযোগ স্থাপিত হয়েছে এবং এটি ব্যতীত ইসির দেওয়া তালিকা থেকে অন্য কোনো প্রতীক পছন্দ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এনসিপি চিঠিতে একাধিকবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রতীক নিয়ে হওয়া আলোচনার ধারাবাহিকতা তুলে ধরেছে-
প্রতীক তালিকাভুক্তি উদ্যোগ : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসি নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) এ নতুন করে প্রতীক তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়।
এনসিপি দাবি করে, সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্তির চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করেছিল এবং গত ৪ জুন ইসির একজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে এনসিপিকে আশ্বস্ত করা হয় যে, চূড়ান্ত তালিকায় শাপলা প্রতীক রয়েছে।
এর আগে গত ২২ জুন এনসিপি নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং শাপলা প্রতীক সংরক্ষণের আবেদন জানায়। পরবর্তীতে ৩ আগস্ট এনসিপি প্রতীক সংরক্ষণের ক্রম হিসাবে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা পছন্দ করে চিঠি পাঠায়।
চিঠিতে এনসিপি অভিযোগ করেছে, তাদের ৩ আগস্ট ও ২৪ সেপ্টেম্বরের দরখাস্তের বিষয়ে কমিশন অদ্যাবধি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়েই (অর্থাৎ দরখাস্ত দু'টি অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে) ৩০ সেপ্টেম্বরের সূত্রোক্ত চিঠি প্রেরণ করেছে, যা বিধিসম্মত হয়নি।
চিঠিতে এনসিপি জানায়, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ সারাদেশের ১০১ জন বিজ্ঞ আইনজীবী শাপলাকে প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিতে কোনো আইনি বাধা নেই বলে ইতঃপূর্বে বিবৃতি দিয়েছেন। এমন কী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে, 'শাপলা প্রতীক এনসিপিকে না দেওয়াটা খুব বেশি আইনের জটিলতা বলে আমি মনে করি না। এটা দেওয়া যেতেই পারে। এছাড়া নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাও এনসিপির অনুকূলে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে তার দলের ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
এনসিপি মনে করে, শাপলাকে প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করা এবং এনসিপিকে বরাদ্দ না দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কোনো আইনি ভিত্তি দ্বারা গঠিত নয় বরং এনসিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। তাদের মতে ইসি প্রতীক ইস্যুতে অন্যায্য আচরণ করছে, যা স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
চিঠিতে এনসিপি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব করা এবং শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত, আইনবহির্ভূত, বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী আচরণ করার অভিযোগ এনেছে। এনসিপি মনে করে, এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন অসৎ উদ্দেশ্যে এনসিপিকে নির্বাচনি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত করছে, যা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে ইসির সদিচ্ছাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
সার্বিক বিবেচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি আশা করে, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধি ৯(১) সংশোধনক্রমে এনসিপি'র অনুকূলে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা, এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে।
এর আগে ‘শাপলা’ প্রতীকের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাসউদ গণমাধ্যমকে বলেন, কে চাইলো, কে চাইলো না—এটা তো প্রশ্ন না। কেউ যদি বলে দিয়ে দেন বা আমাদের কোনো আপত্তি নেই—এমন বিষয় তো হওয়ার কথা না। কারণ এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত। কিন্তু কেউ বলবে দিয়ে দেন, আর কেউ বলবে দিয়েন না, এটা আমার মনে হয় কমিশনের কাছে বিবেচনার বিষয় হবে না। বিবেচনার বিষয়গুলো বিবেচনা করে যদি কমিশন মনে করে দেবে, না হয় দেবে না। একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নিজস্ব নিয়ম-কানুনে যে সমস্ত ফ্যাক্টর কাজ করে, সেগুলো নিয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।