খুলনায় গুদামভর্তি পেঁয়াজ, তবুও বাড়তি দাম

থরে থরে সাজানো পেঁয়াজ, সরবরাহে কমতি নেই। তবুও অদৃশ্য কারণে বাড়ছে দাম। তবে কি মজুদ সিন্ডিকেট? নাকি অসাধু উপায়ে দাম বাড়ানোর কৌশল? এমনই-সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রেতাদের মাঝে।
খুলনায় দিন যত যাচ্ছে, পেঁয়াজের দামও বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুলনায় কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে অন্তত ২৫ টাকা। হাত ঘুরলেই যেন বেড়ে যায় দাম।
পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিতে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। আর খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন তারা। অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, মজুদ সিন্ডিকেট আর ঠুনকো অজুহাতে দাম বাড়ানো হয়েছে।
নগরীর খালিশপুর, দৌলতপুর, নিউ মার্কেট, ময়লাপোতা, জোড়াকল বাজার, নতুন বাজার, বয়রা বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় বাজারভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। আর সোনাডাঙ্গা পাইকারি বাজারের আড়তে তা বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৮ টাকা দরে। অর্থাৎ, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দামের ব্যবধান ১২-১৩ টাকা।
পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।
কেডিএ নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে আসা হারুন অর রশীদ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘৫০-৬০ টাকার পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা তো কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছি না। এটা মজুদের কারণে, নাকি বন্যার কারণে বাড়ানো হয়েছে?’
ওই বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা শুকুর আলী বলেন, ‘আমি সামান্য বেতনে কাজ করি। সীমিত টাকায় পেঁয়াজ কিনব, মাছ কিনব, নাকি তরকারি ও চাল কিনব? বাজারের এমন অবস্থায় গরীব মানুষের খুবই কষ্ট।’
খালিশপুরের খুচরা বিক্রেতা সোহাগ বলেন, ‘সীমিত লাভ রেখেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, তাই আমাদেরও বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে পেঁয়াজ মানভেদে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা দুই সপ্তাহ আগেও ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করেছি।’
কেডিএ নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারের বিক্রেতা মহাদেব সাহা বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। এই সময়ে দাম কিছুটা বাড়ে। তার ওপর ঘন বর্ষা। দীর্ঘদিন মাল ওঠে না, আমদানিও কম। এই কারণে দাম একটু বেশি।’
তবে দাম অতিরিক্ত বাড়বে না। ৮০ টাকা হলেও এখনও তা স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই বিক্রেতা।
মহাদেব সাহা আরও বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় ৮০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বেশি না। আগে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ছিল, এখন ৮০ টাকা হয়েছে। অস্বাভাবিক নয়। এক মণ কাঁচা পেঁয়াজ কিনলে ৮-১০ কেজি শুকিয়ে যায়। কিছু দাগি-পচা বের হয়। এ জন্য এই সময়ে দাম একটু বেড়ে থাকে।’
বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই উল্লেখ করে এই বিক্রেতা বলেন, ‘দাম কিছুটা বেড়েছে। এলসি করে আনা হলে দামে কিছুটা প্রভাব পড়বে। এখনও এলসি করে না আনা উচিত। পেঁয়াজের দাম এখনও স্বাভাবিক আছে।’
সোনাডাঙ্গা কাঁচা বাজারের আল্লাহর দান-১ আড়তের পাইকারি বিক্রেতা ইয়াদ আলী বলেন, ‘দেশে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ রয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ কম আসছে। এ ছাড়া এলসি দেওয়া হয়নি এখনো, আগামী ১৫ তারিখে এলসি দেবে। তখন আবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমে যাবে। বর্তমানে আমরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছি।’
ইয়াদ আলী আরও বলেন, ‘১৫ তারিখে এলসির অনুমোদন দিলেও পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, বরং তখন দাম ৫০ টাকা কেজিতে নেমে আসবে।’
সোনালী বাণিজ্য ভাণ্ডারের বিক্রেতা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই সময় পেঁয়াজের বাজার একটু চড়া হয়। বৃষ্টির সিজনে মালের সংকট হয়, কারণ পেঁয়াজ পচনশীল। বৃষ্টি হলে পেঁয়াজ সরবরাহ কমে যায়, তাই বাজারে দাম বেড়ে যায়। এখন সরবরাহ বাড়লে বাজার আবার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’