চর্ম রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

দেশে অন্য রোগীর চাইতে চর্ম রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এ কারণে দেশের হাসপাতালগুলোতে চর্ম রোগের বহিঃবিভাগ চালু করা জরুরি বলে মনে করছেন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সন্দ্বীপ কলোনী রহমানিয়া মুহাম্মদিয়া মাদরাসা মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প শেষে চিকিৎসকরা এসব তথ্য জানান। বাংলাদেশ একাডেমি অব ডার্মাটোলজি এ ক্যাম্পের আয়োজন করে।
ক্যাম্পে বাংলাদেশ একাডেমি অব ডার্মাটোলজির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রফেসর ডা. সাইফুল ইসলাম ভুঞা, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ডা. শামসুন নাহার বিনতে মান্নান, ডা. সাজিয়া আফরিন, ডা. সুমিত্রা দাশগুপ্ত ও ডা. লুৎফর রহমান রাহাত তিন শতাধিক রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন।
চিকিৎসকরা জানান, চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অর্ধেকের বেশী মানুষ চর্ম রোগের বিভিন্ন উপসর্গ স্কেবিস, ছত্রাক, সোরিয়াসিস, ভাইরাস সংক্রামক, ফাঙ্গাশ সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগ থেকে রেহাই পেতে সচেতনতা তৈরি জরুরি।
ডা. সাইফুল ইসলাম ভুঞা আরও জানান, বাংলাদেশ একাডেমি অফ ডার্মাটোলজি বাংলাদেশের চর্ম রোগ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেবাদানকারী চিকিৎসকদের সংগঠন। আমাদের দায়িত্ব আছে প্রত্যন্ত এলাকায় গরীবদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া। ডামলিংক প্রজেক্টের আওতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। এবছর চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে ধলই ও জোবরাতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এটি তৃতীয় স্থান। এর পরে আমরা ফলোআপ চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ডা. শামসুন নাহার বিনতে মান্নান বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় চর্মরোগে আক্রান্তদের পুরো শরীরে রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে জটিল রোগী চিহ্নিত করে সুস্থ করে তুলতে পারলে নতুন বাংলাদেশে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। হাসপাতালে চর্মরোগীর সংখ্যা বেশী। প্রতিদিন একটি হাসপাতালে তিন শতাধিক রোগী আসে চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে। গত এক বছরে বাড়ছে ১০ হাজার রোগী, যা খুবই ভয়াবহ। স্যাটেলাইট ক্লিনিকে বহির্বিভাগ চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে চর্ম রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। প্রতিটি ইউনিয়নে এসব স্যাটেলাইট ক্লিনিক করা বেশ প্রয়োজন।
ডা. শামসুন নাহার আরও বলেন, রোগীদের জ্ঞানের অভাব। রোগ সম্পর্ক বুঝে না। চর্ম রোগীরা ফার্মেসি থেকে ভুল চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। যারা চিকিৎসক নন এরাই রোগীদের বেশী ক্ষতি করছে। এক রোগে অন্য রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে দেয়। এর ফলে রোগীদের লিভার নষ্ট হয়। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। রোগীদের আরো বেশী জটিলতা বেড়ে যায়। সরকারি হাসপাতালে রোগীরা ফ্রিতে চিকিৎসা সেবা পেত। সেটি হাজার হাজার টাকার ক্ষতি করে দেয়।

গবেষণা করে ডা. শামসুন নাহার জানান, বিভিন্ন ধরনের জটিল চর্ম রোগে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ ভুগছে। স্কেবিস, ফাঙ্গাস, সোরিয়াসিস রোগীর সংখ্যা এসব এলাকায় বেশী। আনকমন রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। সামাজিক অবস্থা, অপরিষ্কার জীবনযাত্রা এসব জটিল রোগের প্রধান কারণ। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে লতাপাতার রস লাগিয়ে হোমিওপ্যাথি ওষুধ সেবন করে ঝাঁড়ফুঁক দিয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের কারণে দেশে চর্ম রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজনে নারী ও শিশুসহ ৫০০ জনেরও বেশি রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ প্রদান করা হয়।