জাজিরায় ৭০০ মিটার রক্ষাবাঁধ পদ্মায় বিলীন

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাটের পাইনপাড়া এলাকায় পদ্মাসেতু প্রকল্পের নির্মাণ ইয়ার্ড থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অব্যাহত নদীভাঙনে পদ্মা নদীতে প্রায় ৭০০ মিটার ডান তীর রক্ষাবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। গত ৭ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভাঙন এক মাসেরও বেশি সময় ধরে থেমে থেমে চলমান রয়েছে।
এতে পাইনপাড়াসহ ছয় থেকে সাতটি গ্রামের মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। তারা তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে, অনেকে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। খাদ্য, বাসস্থান ও নিরাপত্তাহীনতায় তারা দিন কাটাচ্ছে অনাহারে-অর্ধাহারে।
ক্ষতিগ্রস্ত আ. মান্নান মাদবর জানান, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মাসেতু প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাঝিরঘাট থেকে পূর্ব নাওডোবা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করে। তবে গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে মাঝিরঘাট এলাকায় বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। সে সময় ১০০ মিটার বাঁধ বিলীন হলে প্রায় দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে মেরামতের কাজ করা হয়। এরপর পদ্মা নদীর পূর্ব পাশে গভীরতা বৃদ্ধির ফলে পুরো বাঁধটিই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড নিশ্চিত করে।
গত ৭ জুলাই (শনিবার) ভোরে বাঁধের পুনঃসংস্কার করা অংশ আবারও ভেঙে পড়ে। একদিনের মধ্যেই প্রায় ২৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। ভোরে মাইকিং শুনে স্থানীয় লোকজন নদীর পাড়ে ছুটে আসেন। তারা তখনই নিজ উদ্যোগে ঘরবাড়ি সরানোর চেষ্টা শুরু করেন।
খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষণিকভাবে জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করে। এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে, তবে ভাঙন এখনও থামেনি। নদীর তীব্র ভাঙনের ফলে মুহূর্তেই ঘরবাড়ি ও জমিজমা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, কোনো কিছু সরিয়ে নেওয়ার সময় পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। গত ৭ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩০০টি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, নভেম্বর থেকে পাইনপাড়া ও ওসিমদ্দিন মাদবর কান্দি এলাকায় ভাঙন চলছে। আমাদের দোকানপাট, আসবাবপত্র, এমনকি কাপড়চোপড়ও নিতে পারিনি। সবকিছু পদ্মায় চলে গেছে। আমরা শুধু চাই একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ। কিন্তু কবে হবে সেটা কেউ জানে না।
ক্ষতিগ্রস্ত নাছিমা বেগম বলেন, নদীতে আমাদের সব কিছু চলে গেছে। পেটে ভাত নেই, মাথায় ছাউনি নেই। কাজ নেই, আয় নেই। অন্যের জমিতে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। আমরা পুনর্বাসন চাই।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের শুরুতেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ডাম্পিং কাজ শুরু করেছে। এ কাজ চলমান রয়েছে। স্থায়ীভাবে রক্ষাবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলেই কাজ শুরু হবে।