অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ওটিএ, নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা চায় আটাব

অতিরিক্ত কমিশন ছাড়ের অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতারণা ফাঁদ তৈরি করেছে বেশ কিছু অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ)। বাজার মূল্যের চেয়ে তারা প্রতি টিকিটে ছাড় দিচ্ছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা, ক্ষেত্র বিশেষে আরও বেশি। এতে, উড়োজাহাজের টিকিট মূল্য হয়ে পড়ছে অনিয়ন্ত্রিত। ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’-এর মতো প্রতিষ্ঠানও এর বাইরে নয়। আর এসব প্রতারণায় শেষমেশ ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহক ও টিকিট বিক্রেতা এজেন্সি, যাঁরা অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের জন্য অর্থ পরিশোধ করেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) এসব তথ্য তুলে ধরে বলছে, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং লোভনীয় প্যাকেজ ও অধিক মূল্য ছাড়ের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য এক বছার আগেই সাধারণ যাত্রীদের সতর্ক করেছিল। তাদের আশঙ্কা সত্য হলো ফ্লাইট এক্সপার্টের প্রতারণার মধ্য দিয়ে। এ ধরণের ভোগান্তি রোধে তাই ওটিএ নিয়ন্ত্রণ চাই আটাব। একইসঙ্গে তারা নীতিমালার দাবি জানিয়েছে।
আটাব এক বিবৃতিতে রোববার (৩ আগস্ট) জানিয়েছে, বাজারে এয়ারলাইন্স টিকিটের দর নিয়ন্ত্রণ ও গেম প্লে করে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। ফ্লাইট এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠানটিও ছাড়ের ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা’য় জড়িয়ে পড়ে। যে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে ফ্লাইট এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠিত এবং ২০১৭ সালে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির (ওটিএ) কার্যক্রম শুরু করে। ফ্লাইট এক্সপার্ট ৭/৮ বছর যাবত অনলাইনে ট্রাভেল এজেন্সি হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করছিল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক গ্যারান্টি মোট ৫০ কোটি টাকা। এর বাইরে তারা বিভিন্ন বড় এজেন্সি থেকে টিকেট সংগ্রহ করে পুনরায় বিক্রয় করত, যার আর্থিক পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। অথচ, গত ২ আগস্ট প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, অফিস থাকে তালাবদ্ধ এবং ওয়েবসাইটও করা হয় অকার্যকর। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা অংশীদার এবং সিইও সালমান বিন রশিদ শাহ সায়েম দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
ফ্লাইট এক্সপার্টের প্রতারণার ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতে নিয়ে গতকাল বিকেলে আটাবের প্রধান কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী পরিষদের জরুরি সভা করে। সভায় আটাবের গঠনতন্ত্র মোতাবেক বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরমধ্যে ফ্লাইট এক্সপার্টকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও সদস্যপদ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ, যাত্রী হয়রানি ও ট্রাভেল এজেন্টদের আর্থিক ক্ষতি কমাতে ফ্লাইট এক্সপার্টের ইস্যু করা টিকেটগুলোর রিফান্ড স্থগিতের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো, ব্যাংক যেন ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ডে অতিরিক্ত ডিসকাউন্টের অফার দিয়ে মার্কেটে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি না করে সে মর্মে ব্যাংকে অনুরোধ জানানো, অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দিয়ে টিকেট বিক্রয়ের প্রচার-প্রচারণা ও বিক্রয়কারী এজেন্সিদের কর্মকান্ড সরকারের দৃষ্টিতে আনা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন আটাব সভাপাতি আব্দুস সালাম আরেফ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন—আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ, অর্থ সচিব শফিক উল্লাহ নান্টু, উপমহাসচিব তোহা চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আতিকুর রহমান, নির্বাহী সদস্য দিদারুল হক, সিনিয়র সদস্য ও সাবেক মহাসচিব জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী দীপুসহ প্রমুখ। জরুরি সভা থেকে আরও সিদ্ধান্ত আসে, ভুক্তভোগী সব সদস্যদের প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা পেতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আটাব সহায়তা করবে।