বৃষ্টিপাতে সেচ খরচে সাশ্রয়, আমন আবাদে ব্যস্ত চাঁপাইয়ের চাষিরা

বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে আবাদ করা হয় আমন ধান। এবার কিছুটা আগামই দেশে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এ কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা শুরু করেছেন আমন ধানের আবাদ। পরিমাণমতো বৃষ্টিপাত হলে এবার সেচ খরচ সাশ্রয় হবে বলে প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আবাদি জমিগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, আমন চাষে এখন মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কেউ জমিতে আমনের চারা রোপণ করছেন, কেউ চাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন তো কেউ জমির আইল ঠিক করতে ব্যস্ত।
সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মাঠ এলাকায় ইউএনবির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন কৃষক শাহলাল আলী। তিনি ১২ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করছেন। আরও ৬ বিঘা জমিতে আবাদ করবেন বলে জানান।
শাহলাল আলী বলেন, এবার কিছুটা আগাম বর্ষা শুরু হয়েছে। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে এটা আবাদের জন্য ভালো হয়েছে। জমি প্রস্তুতে যে সেচ খরচ হয় সেটা লাগেনি চাষিদের। এভাবে যদি থেমে থেমে বৃষ্টি হতে থাকে তাহলে সেচ খরচটা কমে যাবে।
এলাকার চাষি আকবর আলী বলেন, আমন ধান বর্ষাকালেই লাগাতে হয়। সে কারণে বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি আকাশের পানির ওপর নির্ভর করেই এ ধান লাগিয়েছেন তারা।
তিনি জানান, বৃষ্টি না হলে গভীর নলকূপের পানি সেচ দিতে হয়। তবে এবার সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা সবাই আবাদ শুরু করেছেন। তিনিও ৮ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। আরও ২ বিঘা জমি আবাদ করবেন তিনি।
আকবর আলী বলেন, ওই জমিটা একটু নীচু, এজন্য বৃষ্টির পানি জমে গেছে। পানিটা কমলেই ধানের চারা লাগাব। বাজারে ধানের দামটা ভালো থাকায় এবার সবার ধান আবাদে আগ্রহ বেড়েছে এবং আবাদ বেশি হবে মনে করছি।
একই মাঠে কাজ করছিলেন কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, হালের দাম বেশি, কৃষিশ্রমিকের দাম বেশি। তার ওপর তাদেরকে খাবারও দিতে হচ্ছে। কৃষক মানুষ, কী করব! চাষাবাদ করেইতো চলতে হচ্ছে।
তিনি জানান, এবার সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় আবাদের শুরুতে সেচ খরচ লাগেনি। এ পর্যন্ত তিনি সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। আরও ৬ বিঘা বাকি আছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫৪ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, নাচোল উপজেলায় ২২ হাজার ৪০০ হেক্টর, গোমস্তাপুর উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৭০ হেক্টর, ভোলাহাট উপজেলায় ৫ হাজার ৫০ হেক্টর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় ৬০০ হেক্টর। আর এসব জমি থেকে সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন চাল।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী জানান, চাষিরা উফশী ও হাইব্রিড জাতের আমন আবাদ করছেন। সার ও বীজের কোনো সংকট নেই। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ জেলায় এবার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।