চরাঞ্চলের কৃষিতে কলা চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

লালমনিরহাটের তিস্তা তীরবর্তী চরাঞ্চল ও বুদারুর চরে কলা চাষ কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ধান, পাট, আলু, ভুট্টার মতো প্রচলিত ফসলের বদলে কৃষকরা এখন ঝুঁকছেন কলার দিকে।
কৃষকদের মতে, কলা চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম, লাভ বেশি। সেইসঙ্গে গড়ে উঠেছে সংগঠিত বাজার ব্যবস্থা। লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী হাট এখন কলার কেন্দ্রীয় বাজারে পরিণত হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার বসা হাটে দেশের নানা প্রান্তে পাঠানোর জন্য প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার কলা কেনাবেচা হয়।
এই হাটে লালমনিরহাট ছাড়াও কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও রংপুরের কাউনিয়া-গঙ্গাচড়ার চাষিরাও কলা আনেন। রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় এখানকার কলা সরবরাহ করা হয়।
বর্তমানে চরাঞ্চলে মালভোগ, চিনি চম্পা, সাগর ও রঙিন জাতের কলা চাষ হচ্ছে। চিনি চম্পা জাতটি রোগ প্রতিরোধী ও অধিক ফলনশীল হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের চাষি আলতাব আলী জানান, এক বিঘা জমিতে কলা চাষে খরচ হয় ২৫-৩৫ হাজার টাকা। আয় হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
বড়বাড়ী হাটের কলা ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতি হাটে ৫০০-৬০০ কাঁদি কলা ঢাকায় পাঠানো হয়। পরিবহণ খরচ ও মজুরি কিছুটা বেড়েছে, তবে লাভ এখনও সন্তোষজনক।
খুচরা ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ জানান, এই হাটে প্রায় ২৫-৩০ জন আড়তদার ও শতাধিক শ্রমিক কর্মরত। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগও বেড়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস জানায়, দেশে বছরে প্রায় ১০ লাখ টন কলা উৎপাদিত হয়, যা আমের পরেই সর্বাধিক। বেলে দোআঁশ মাটি ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা চরাঞ্চলকে কলা চাষে উপযোগী করেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, কলা একটি বর্ষজীবী ফসল। একবার রোপণ করলে কয়েক বছর ফলন পাওয়া যায়। চরাঞ্চলের জমিতে কলা চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। কৃষি বিভাগ নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করছে।
সাইখুল আরিফিন বলেন, লালমনিরহাটের কলা এখন আর শুধুই বিকল্প ফসল নয়। বরং এটি কৃষির টেকসই সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠেছে। চাষিদের নিষ্ঠা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এই সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।