‘টাঙ্গুয়ার হাওর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হবে’

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা ও হাওরপারের মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়নের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আজ সোমবার (৩০ জুন) এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের অন্যতম পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে নতুন প্রকল্পের সূচনা উপলক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, হাওরের সংকট চিহ্নিত করে, সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এই হাওর রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে।
‘টাঙ্গুয়ার হাওর : জলাভূমি বাস্তুতন্ত্রের সম্প্রদায়ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি পরিচালিত হবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির যৌথ ব্যবস্থাপনায়। এতে ব্যয় হবে ৪৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমির সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা, যার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণকে যৌথ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করা, সংকটাপন্ন জলাবন ও জলজ আবাসস্থল পুনরুদ্ধার করা এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পালের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অঞ্জন কুমার দেব রায়।
কর্মশালায় মূল বক্তব্য তুলে ধরেন প্রকল্পের পরিচালক শাহেদা বেগম। কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, হাওরপারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার।
কর্মশালায় মূল বক্তব্যে শাহেদা বেগম বলেন, এই প্রকল্পে হাওরের জলাভূমি সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান নির্ধারণ, মানচিত্র প্রস্তুত করে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ণ করা হবে। হাওরের ইকো সিস্টেমের মূল্য নির্ধারণ ও জীববৈচিত্র্যের রেজিস্টার তৈরি করা হবে। হাওর ব্যবস্থাপনায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে টেকসই অর্থায়ন কৌশল প্রণয়ন, অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা হবে।
শাহেদা বেগম আরও বলেন, এই প্রকল্পে স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করতে প্রশিক্ষণ, কর্মশালার আয়োজন করা হবে। ৩৮০টি পরবিারকে বিকল্প আয় বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া হবে। স্থানীয় মানুষজনকে নিয়ে কান্দায় জলাভূমি বাগান, বিলের আবাস্থল উদ্ধার, মাছ ও অন্যান্য জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য ১০টি অভয়াশ্রম তৈরি করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে প্রকল্পে।
মুক্ত আলোচনায় হাওরপারের মানুষজন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২২ বছরেও কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি। এই সময়ে নানা প্রকল্প হয়েছে। এতে মানুষের মনে একটা অবিশ্বাস ও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এখন হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংকটে আছে। গাছ, মাছ, পাখি কমে গেছে।
কর্মশালায় অতিরিক্তি পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ, সাংবাদিক খলিল রহমান, জেলা পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার, শিক্ষক মোদাচ্ছের আলম, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা, সাধারণ সম্পাদক পীযূষ পুরকায়স্থ, সমবায় কর্মকর্তা মো. মাসুদ আহমদ, হাওরপারের বাসিন্দা গোলাম নূর, নূর আলম, অজিত হাজং, আইরিন বেগম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার বলেন,‘এই হাওর নিয়ে অতীতে যা হয়েছে ভবিষ্যতে মানুষ সেটা দেখতে চায় না। প্রকল্পের নামে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়েছে। হাওরের মানুষের কোনো লাভ হয়নি। প্রকৃতি ও পরিবেশের উন্নয়ন হয়নি। সবাই মিলেই টাঙ্গুয়ার হাওরকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে এসেছে।’
সুনামগর শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় এই হাওরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট।
১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করার পর ৭০ বছরের ইজারাদারির অবসান হয়। ২০০০ সালে এটি ‘রামসার সাইট’ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ২০০১ সালে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। এরপর জেলা প্রশাসন হাওরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।