টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন ঘিরে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এস এম জিলানীর

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ঘিরে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানী। আজ রোববার (২৯ জুন) দুপুরে টুঙ্গিপাড়া পৌর বাস টার্মিনালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে এস এম জিলানী বলেন, বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ঘিরে প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। যারা গত ১৭ বছর আমাদের টুঙ্গিপাড়ায় রাজনীতি করা থেকে বঞ্চিত রেখেছিল, গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত করেছে—গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তাদের দলের সব সদস্য দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। কী কারণে গেছে? আপনারা সবাই জানেন। আমি মনে করি প্রতিপক্ষ কারা আপনারা বুঝেছেন।
এস এম জিলানী আরও বলেন, তারা নানাভাবে পর্দার অন্তরালে থেকে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে। কিংবা ষড়যন্ত্র করতে পারে। তবে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ আমরা আপনাদের দিতে পারব না। আমরা এ বিষয়ে একটু খেয়াল রাখতে চাই। সতর্ক থাকতে চাই। আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।
সংবাদ সম্মেলনে জিলানী আরও বলেন, বিএনপি একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বিরোধী মতকে আমরা শ্রদ্ধা ও সম্মান করি। আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বলে এবং গণতন্ত্রের চর্চা করে। দীর্ঘ সময় আমরা রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলাম। দেশে ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছিল তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী। হরণ করা হয়েছিল বাকস্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার। আমরা গত ১৭ বছর এ অধিকার আদায়ের রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। এই আন্দোলন সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে গতবছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা গত ১ জুন কোটালীপাড়ায় সম্মেলন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছি। দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামীকাল টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা ইতোমধ্যে সম্মেল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসাহ-উদ্দীপনা।
আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি এই সম্মেলন বানচাল করার জন্য পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে মন্তব্য এস এম জিলানী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। প্রশাসন এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। আশা করি আপনাদের সবার সার্বিক সহযোগিতায় সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আগামীকালের সম্মেলন সফল করব। এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপির নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে, যারা দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।
আগামীকালের সম্মেলনকে সফল করতে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন দলীয় নেতাকর্মীরা সভা-সমাবেশ করেছে।
সম্মলনে প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, বিশেষ অতিথি সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ, ফরিদপুর বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশরুর হোসেন ও সেলিমুজ্জামান সেলিম উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান এস এম জিলানী।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামীকাল সোমবার (৩০ জুন) আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নিজ উপজেলা টুঙ্গিপাড়ায় অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলন উপলক্ষে নেতাকর্মীরা আছেন উৎসবমুখর পরিবেশে। ত্যাগী নেতাদের নেতৃত্বে রাখা হবে—এমনটাই প্রত্যাশা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।
টুঙ্গিপাড়া পৌর বাস টার্মিনাল মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জ-পিরোজপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে সম্মেলন স্থলে নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী প্যান্ডেল। সড়কে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ও সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি এলাকায় এ সম্মেলন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে কি না এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও রয়েছে শঙ্কা।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও পিপি অ্যাডভোকেট কাজী আবুল বশার খায়ের, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ সালাউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান বাবলু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান নাসির, শেখ শামসুল হক, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব এমদাদ হোসেন মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।