সুষ্ঠু ও সুন্দর জাতীয় নির্বাচন করা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর জাতীয় নির্বাচন করা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার আমরা করছি। তাই কোন মেঘা প্রকল্প হাতে নিতে পারছি না। অল্প সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পসমূহ আমরা অনুমোদন দিচ্ছি। এছাড়া দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আমরা অন্তত শুরু করার চেষ্টা করছি।
শনিবার (২৮ জুন) চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি সেবা প্রদানকারী সংস্থা, উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন আয়োজিত এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) শারমিন জাহানের সভাপতিত্বে সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনসহ সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
নগরীর বহদ্দারহাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের অংশ সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়নি উল্লেখ করে উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ অংশে বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে পরিবেশ সমুন্নত ও সৌন্দর্য বর্ধন করতে হবে। গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
পরে তিনি সেবা সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাদের কাছে তাদের প্রকল্পসমূহের বর্তমান অবস্থা, অর্থ ব্যয় ও সমস্যাদি জানতে চান। পাশাপাশি যেসব নতুন প্রকল্প কয়েক মাসের মধ্যে শুরু করা যাবে সেগুলো সম্পর্কে সভায় তুলে ধরা ও মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণের নির্দেশনা দেন।
এসময় সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রভৃতি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ তাদের প্রকল্পগুলোর চলমান অগ্রগতি তুলে ধরেন।
কর্মকর্তাদের বক্তব্য শুনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, কোন প্রকল্প দীর্ঘকাল ধরে চলমান রাখার অর্থ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে জনভোগান্তি চালু রাখা। এ ধারা পরিহার করতে হবে। চট্টগ্রাম জনসংখ্যায় বড় হয়েছে- সুযোগ সুবিধায় বড় হয়নি। সমস্যা রয়েই গেছে। এ নগরীকে আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা যেতো। তবে তা করা হয়নি। অনেক সমস্যা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় রয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা নগরীর জলাবদ্ধতা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সংকট, খাল নালা ভরাট ও সেগুলো পরিস্কার না করা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, পাহাড়কাটা, পাহাড়ধস, অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রভৃতি সমস্যার কথা উল্লেখ করেন।
সভায় জানানো হয়, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালের জুন মাসে শেষ হবে। বর্তমানে এ প্রকল্প শেষের দিকে। নগরীর বিভিন্ন খাল নালা ড্রেন নিয়মিত পরিস্কার করা হচ্ছে। ড্রেন ও খালের মধ্যকার বাঁধ ও পানি প্রবাহের বাধা অপসারণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের বারইপাড়া খাল খনন কার্যক্রম ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া চারজন উপদেষ্টার সমন্বয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। এসব কার্যক্রমের কারণে এ বছর নগরীর কোথাও এখন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি।
সভায় মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি নগরীর সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত সমন্বয় করছি। তাদের এক ছাতার নিচে এনে নগরবাসীর সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। ফলে গত কোরবানিতে কোথাও বর্জ্য অব্যবস্থাপনা বা অপরিস্কার দেখা যায়নি।
মেয়র সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নেওয়া ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ’প্রকল্প নিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প ব্যয় কাটছাঁট করা হয়েছে। তাছাড়া অনুমোদিত অর্থের ৬০ ভাগ ঋণ হিসেবে নিতে বলছে। এটা হতে পারে না। করপোরেশন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, তাই সরকারি তহবিল হতে টাকা দিলে নগরবাসীর উপকার হবে। তাছাড়া করপোরেশনের পূর্ব থেকেই অনেক ঋণ রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেন। মেয়র এসময় সিটি গভর্নমেন্ট বা নগর সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।