‘ঢাকা-বেইজিং-ইসলামাবাদ জোট’ গঠনের বিষয়টি নাকচ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনও জোট গঠনের ধারণা নাকচ করে বলেছেন, তিন দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠকটি রাজনৈতিক প্রকৃতির নয় বরং একটি অনানুষ্ঠানিক সরকারি পর্যায়ের আলোচনা ছিল।
গত ১৯ জুন চীনের কুনমিংয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কোনও জোট গঠন করছি না।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “এটি সরকারি পর্যায়ের একটি বৈঠক ছিল, রাজনৈতিক পর্যায়ের নয়”যেখানে “কোনও জোট গঠনের কোনও বিষয় ছিল না”।
ভারতকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এই বৈঠক করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হোসেন বলেন, “এটি অবশ্যই কোনও তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য করে অনুষ্ঠিত হয়নি। আমি আপনাদেরক তা আশ্বস্ত করতে পারি”।
এর আগে এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুনমিংয়ে নবম চীন-দক্ষিণ এশিয়া প্রদর্শনী এবং ষষ্ঠ চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা ফোরামের অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা একটি “অনানুষ্ঠানিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক” করেন।
চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকীর সাথে বৈঠকে ঢাকার প্রতিনিধিত্ব করেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিক।
চীন ও পাকিস্তান এ বৈঠকের বিষয়ে পৃথক বিবৃতি জারি করেছে, যেখানে বেইজিং জানিয়েছে যে, তিনটি দেশ “ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার উপর ব্যাপক আলোচনা” করেছে এবং “সুপ্রতিবেশীসুলভতা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সমতা, উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তি এবং অভিন্ন উন্নয়নের” ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
অন্যদিকে, ইসলামাবাদ এই বৈঠককে “বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার সূচনা বৈঠক” হিসাবে বর্ণনা করেছে।
ঢাকা এই ধরনের কোন কিছু প্রত্যাখ্যান করেছে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “কোনও কিছু অস্বীকার করার দরকার নেই।” তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, এটি “বড় কিছু নয় এবং কাঠামোগত কিছু নয়”।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আলোচনা মূলত সংযোগ এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে কেন্দ্রীভূত ছিল। তিনি আরো বলেন, “যদি আরও কোনও অগ্রগতি হয়, তাহলে আপনারা জানতে পারবেন। অনুমান করার খুব বেশি সুযোগ নেই”।
ভারতের মতো সম্ভাব্য কোন একটি কাল্পনিক দেশের উদাহরণ তুলে ধরে হোসেন আরও বলেন, কুনমিংয়ের মতো অন্যান্য দেশের সাথেও এই ধরনের আলোচনার বিষয়ে ঢাকার কোনও আপত্তি নেই।
উপদেষ্টা আরও বলেন, “ভারত যদি বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের মধ্যে এমন একটি বৈঠক করতে চায়, তাহলে ঢাকা পরের দিনও বৈঠক ‘করতে’আগ্রহী থাকবে। ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্ক বর্তমানে ‘পুনর্বিন্যাস’ এর একটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সাথে সম্পর্ক এখন ‘পুনর্বিন্যাস’-এর পর্যায়ে রয়েছে এবং ঢাকার পক্ষ থেকে সেই লক্ষ্যে সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই।”
পুনর্বিন্যাস বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেখুন, আসুন আমরা সত্যটি স্বীকার করি। ভারত এবং পূর্ববর্তী সরকারের মধ্যে যে গভীর সম্পর্কের পর্যায় ছিল এবং ভারত যে ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, আমাদের সাথে বর্তমান সম্পর্ক সেই ধরনের নয়।”
কুনমিং বৈঠকে, তিন পক্ষ অবকাঠামো, সংযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, সমুদ্র ইস্যু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
ঢাকার তথ্য অনুসারে, প্রতিনিধিদল উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তি, সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ এবং পরস্পরের জন্য লাভজনক পদ্ধতির ভিত্তিতে সহযোগিতা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।