ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৬ গ্রাম প্লাবিত

ফেনীর ফুলগাজীতে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় ঢলের পানির কারণে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত ১০টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বরইয়া এলাকার বণিকপাড়া ও সিলোনিয়া নদীর গোসাইপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে।
আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বসন্তপুর, জগতপুর, বাসুড়া ও বিজয়পুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে রয়েছে। বাঁধ ভাঙার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছে স্থানীয়রা। তারা বলছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বছরের পর বছর ধরে দায়সারা কাজ করে যাচ্ছে।
উত্তর বরইয়ার বাসিন্দা নিশাদ বলেন, ‘আরও একটু পানি বাড়লেই আমাদের ঘরবাড়ি পুরোপুরি ডুবে যাবে। আমরা পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি—কোথায় যাব, কীভাবে রক্ষা পাব বুঝতে পারছি না।’
বরইয়া এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকেই নদীর পানি বাড়ছিল। স্থানীয়রা মিলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হইনি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারও সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে এসেছে।’
বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদ বলেন, ‘প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ে এমন হয়। একটু বৃষ্টি হলেই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে যায়। দোকানের পণ্য ভিজে যায়, বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। অভিযোগ করে লাভ নেই। এখন এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।’
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, ‘গতকাল রাত ১০টার দিকে উত্তর বরইয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে অন্তত চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বৃষ্টিপাত কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। পাউবো ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকায় অবস্থান করছেন। পানি নেমে গেলে সংস্কারকাজ শুরু হবে।’
ফেনী পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, ‘উজানে ভারি বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলছে।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির চাপেই বাঁধ দুটি ভেঙেছে। সংস্কারের কাজ চলছে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ আমরা পেয়েছি, বিষয়টি তদন্তাধীন।’
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জন প্রাণ হারায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোসহ প্রায় সব খাত। পানিবন্দি হয় ১০ লাখের বেশি মানুষ।