জুলাই মাসেই জুলাই সনদ : প্রধান উপদেষ্টা

২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে আসন্ন জুলাই মাসেই জাতির সামনে ঐতিহাসিক ‘জুলাই সনদ’ উপস্থাপন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, এই ‘জুলাই সনদ’ হবে একটি ঐকমত্যভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতিমূলক দলিল, যেখানে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন ও জনকল্যাণকেন্দ্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়া সংস্কার এজেন্ডাগুলোর তালিকা থাকবে। এই দলিলেই দেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখার ভিত্তি স্থাপন হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব ও অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। তারা আমাকেও সেখানে আমন্ত্রণ জানায়। আমি বলেছিলাম, দেশের সব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে সবাই মিলে এ ঘোষণাপত্র দেওয়া ভালো হবে।’
এই প্রেক্ষাপটেই তৈরি হচ্ছে ‘জুলাই সনদ’—যেটি হবে জাতির সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে যে বাংলাদেশ নতুন রাজনৈতিক ঐক্যের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
‘জুলাই সনদ’—একটি প্রতিশ্রুতির দলিল
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই জুলাই সনদ হলো একটি প্রতিশ্রুতি। একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছে, তার মধ্য থেকে রাজনৈতিক দলগুলো যেগুলোর সঙ্গে একমত হয়েছে তার তালিকা থাকবে এই সনদে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোর আশু বাস্তবায়ন শুরু করা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এবং নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিয়ে বাকিগুলো সম্পন্ন করবে। ‘আমরা আশাবাদী, এই জুলাই সনদ জাতিকে একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা দেবে এবং আগামী সংসদ সেই রূপরেখা অনুসারে দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন গঠন করা আমাদের একটি দুঃসাহসিক উদ্যোগ ছিল। অন্য কোনো দেশে এমন কোনো নজির নেই। এর মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে রাজনৈতিক গভীরতার সন্ধান পেয়েছি।’
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্মরণ করিয়ে দেন, এই কমিশনের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনায় অংশ নিয়েছে, লাইভ টেলিভিশনের সামনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে—যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
ড. ইউনূস বলেন, ‘এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি সব রাজনৈতিক দলের সীমাহীন ধৈর্য, সহযোগিতা ও সৌজন্যের জন্য জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি, শিগগিরই আমরা পূর্ণাঙ্গ জুলাই সনদ জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব, যা আমাদের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পথরেখা নির্ধারণ করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ‘এই কমিশনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেশে যে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেটি যদি নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী রূপ পায়, তাহলে আমরা ভবিষ্যতের সব রাজনৈতিক সংকট শক্তভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই সংস্কৃতি হবে অংশগ্রহণমূলক, দায়িত্বশীল এবং সুশাসনভিত্তিক; যেখানে রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক প্রশ্নে থাকবে সর্বসম্মত অবস্থান।
ভাষণের শেষাংশে ড. ইউনূস আহ্বান বলেন, ‘এখন থেকে আমাদের সব প্রস্তুতি এই লক্ষ্যে নিতে হবে—যাতে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয় এবং গণতান্ত্রিক যাত্রা সুসংহত হয়।’
দেশের সব মানুষ—কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক, জেলে, গৃহিণী, দিনমজুর, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, শিল্পী—সবার সম্মিলিত উদ্যোগের নিখুঁত, সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করার আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।