হতাশ বেপারিরা, অপেক্ষা শেষ দিনের

ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি। এই যখন অবস্থা তখন গাবতলী গবাদিপশুর হাটে প্রচুর গরু-ছাগল-দুম্বার দেখা মিলছে। রয়েছে উটও। হাট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মানুষের চেয়ে পশুর সংখ্যাই যেন বেশি। হাটের প্রবেশদ্বারের দিকে মানুষের সংখ্যা বেশি থাকলেও ভেতরে পশুর সংখ্যাই বেশি। এ দাবি পশু বিক্রেতাদেরও।
বিক্রেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত পর্যন্ত বিক্রি একেবারেই কম। অন্যান্যবার ঈদের তিনদিন আগে থেকে বেশি বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু, এবার তা হয়নি। যদিও তাদের প্রত্যাশা, আগামীকাল শুক্রবার ভালো বিক্রি হবে। কারণ, শহুরে মানুষের পশু কিনে রাখার মতো জায়গা না থাকায় শেষ দিকে বেশি ক্রেতা যায় হাটে।
কুষ্টিয়ার আলম মিয়া। তিনি সাভারের মধুমতী মডেল টাউন এলাকায় থাকেন। গাবতলীর হাটে তিনি দুটি গুরু এনেছেন। তার দাবি, এবার গরুর দাম অনেক কম। গত ২০ বছরের মধ্যেও তিনি বাজারের এতো খারাপ অবস্থা দেখেননি। আগামীকাল শুক্রবারও বেচাকেনার অবস্থা খুব ভালো থাকবে, এমনটা তার মনে হচ্ছে না।
আলম বলছিলেন, ‘আগে জানলে আমি হাটে আসতাম না। এখানে দুটি গরু এনেছি। এই একই ধরনের একটি গরু আমি বাসা থেকে বিক্রি করেছি ২ লাখ ২০ হাজার টাকায়। অথচ, এখানে সর্বোচ্চ দাম বলছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই টাকায় দিলে লোকসান গুনতে হবে। তারচেয়ে ভালো, গরু বাড়িতে নিয়ে যাব।’
আলম মিয়া বলেন, ‘এই তিনটি গুরু আমি ১০ মাস আগে ৭০ হাজার টাকা করে কিনি। এরপর প্রতি মাসে গরুপ্রতি গড়ে ৬ হাজার টাকা করে খরচ করেছি। তারমানে, নিট খরচ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আমার পরিশ্রমের কথা বাদ দিলাম। তাহলে কীভাবে বিক্রি করি? আমার গরু তো খুব একটা বড় না। যাদের গরু বড়, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ।’

আলম মিয়া বলেন, ‘আমার সামনেই একটি বড় গরু ছিল। তিনি আজ বিক্র করে চলে গেছেন। লাভ বাদ দিয়েও গরুর দাম হওয়ার কথা ছিল অন্তত ছয় লাখ। কিন্তু ওই লোক পাঁচ লাখে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। বিক্রির পর ওই মালিক কাঁদছিলেন। বলছিলেন, আর কখনো গরু পুষব না। তিনি অনেক কষ্ট পেয়ে এখান থেকে চলে গেছেন। আমি আর কখনোই এখানে গরু আনব না।’
আলম মিয়া যখন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন পাশে তার ছেলে রহমান মিয়া দাঁড়িয়ে ছিলেন। রহমান বলছিলেন, ‘এ বছর গরুর হাটের খারাপ অবস্থা হয়েছে আওয়ামী লীগের কারণে। তারা হাটে আসছে না। সব পলাতক। দুর্নীতির টাকা না থাকলে বেশি টাকায় গরু-ছাগল কেনা সহজ না। নতুন করে যারা দুর্নীতি করছে, তাদের কাছে বেশি টাকা হয়ে উঠেনি এখনও। আওয়ামী লীগের টাকাওয়ালা লোকজন সব পলাতক। সেজন্য, বাজারের অবস্থা এমন।’
সেজান মল্লিক। তার বাড়ি রাজবাড়ি। তিনি চারটি গরু এনেছেন হাটে। সেজানের দাবি, ‘প্রত্যেকটি গরুর ওজন কমপক্ষে ১৫ মণ। কেজিপ্রতি মাংসের দাম ৭৫০ টাকাও যদি ধরেন তাও অন্তত সাড়ে চার লাখ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু, তিন বা সাড়ে তিন লাখের বেশি কেউ দাম বলছে না। তাহলে কীভাবে বিক্রি করব?’
সেজান মল্লিক বলছিলেন, ‘ছোট ছোট গরুর অবস্থা তাও ভালো। ছাগলও টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। বড় গরুর অবস্থা খুবই খারাপ। তেমন ক্রেতাও আসছে না। দরদাম করছে খুব কম লোক। দরদাম করলেও কম দাম বলছেন। যাতে খরচসহ গরুর মূল দামও আসছে না। এবার হাটে অনেক গরু। কিন্তু সেভাবে লোকজন নেই। তবে, আগামীকাল শুক্রবার বেশি ক্রেতা আসবে বলে আমার ধারণা। গাবতলীর হাটে ঈদের আগের দিন বেশি পশু বিক্রি হয়।’
যশোরের অভয়নগর থেকে কামরুল ইসলাম পাঁচটি গরু এনেছেন গাবতলীর কোরবানির পশুর হাটে। এখন পর্যন্ত একটি গরু বিক্রি করেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘বাকি চারটি বিক্রি কবে হবে জানি না। তবে, ঈদের পরের দিন পর্যন্ত আমি থাকব, যদি এর আগে বিক্রি না হয়। এ গরু আবার বাড়ি নিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। আবার এক বছর পুষতে হবে। এখন পর্যন্ত যা দেখছি, তাতে গরুতে এবার লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, তেমন ক্রেতা নেই। আওয়ামী লীগের লোকজন সব এখনও পালিয়ে বেড়ায়। তারা এবার বাজারে নেই বললেই চলে। এতোবড় একটি দলের লোকজন যদি না আসে, তাহলে বাজারের অবস্থা খারাপ থাকারই কথা। কারণ, টাকা তো সব ওদের কাছে। যাইহোক, যেভাবেই হোক গরু বিক্রি করে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করব।’
হাটে মোট চারটি উট উঠেছে। তার মধ্যে যশোর থেকে নাসির উদ্দিন নামের এক বিক্রেতা তিনটি উট নিয়ে এসেছেন গাবতলী। তিনি তিনটি উটের দুটির দাম হাকাচ্ছেন ১৪ লাখ টাকা করে। একটির দাম হাকাচ্ছেন ১৫ লাখ। নাসির উদ্দিনের দাবি, ‘এ তিনটি উট পাকিস্তান থেকে আনা। এখন পর্যন্ত ক্রেতা কম। নেই বললেই চলে। কেনার জন্য তেমন কেউ আসছে না। যারা আসছেন, হয় ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে। নতুবা দেখতে আসছেন। ক্রেতা কম থাকায় দরদাম করার সুযোগও তেমন একটা হচ্ছে না। তিন-চার দিন এখানে এসেছি। এখন পর্যন্ত তিনটি উটই আছে। তবে আশা করছি, আগামীকাল শুক্রবার অনেক ক্রেতা আসবেন। আমরাও বিক্রি করতে পারব।’
মানিকগঞ্জ থেকে দুটি খাসি এনেছেন এনামুল হক। তিনি গত বুধবার এসেছেন। একটি বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার টাকায়। আরেকটি এখনও বিক্রি হয়নি। এনামুল বলেন, ‘ভেবেছিলাম অন্তত ৪৫ হাজার টাকায় খাসিটি বিক্রি করতে পারব। কিন্তু, পারলাম না। হাটে লোক কম। ক্রেতাও কম। অথচ, প্রচুর গরু-ছাগল উঠেছে হাটে।’