পুকুরে গলদা চিংড়ির লার্ভা উৎপাদনে সাফল্য

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়ায় পুকুরে গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা (পিএল) উৎপাদনে মিলেছে আশানুরূপ সাফল্য। উপজেলা মৎস্য অফিসের সহায়তায় তিন চাষির মাধ্যমে পরিচালিত প্রদর্শনী কার্যক্রমে এই সাফল্য ধরা দিয়েছে।
দেশে গলদা পিএলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৫০০ কোটি হলেও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ মিলিয়ে আনুমানিক উৎপাদন ৫০ কোটি। এই ঘাটতি মেটাতে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও অবৈধভাবে পিএল আসে যা দেশের চিংড়ি শিল্পের জন্য এক বড় হুমকি। এই প্রেক্ষাপটে স্থানীয়ভাবে পিএল উৎপাদনের এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রদর্শনী চাষে সফলতা আসায় মৎস্য বিভাগ, সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং উপকারভোগী চাষিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আশাবাদী ও আনন্দঘন পরিবেশ।
স্থানীয় চিংড়ি চাষি মিজানুর রহমান বলেন, ‘মাটির পুকুরে সুস্থ-সবল রেণু উৎপাদিত হচ্ছে দেখে আমরা আনন্দিত। আগে যে রেণু কিনতাম, তা তুলনামূলকভাবে দুর্বল ছিল। এখন পুকুরে উৎপাদিত রেণু কিনে চাষ করছি—আশা করছি লাভবান হব।’
একইভাবে সফল চাষি মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে গলদা চিংড়ি চাষ করছি, কিন্তু রেণু সহজে পাওয়া যেত না। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে আমার নিজস্ব ২৪ শতাংশ পুকুরে রেণু উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিই। শুরুতে একটু ভয় ছিল, পারব কি না! কিন্তু মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় ৯৬টি মা চিংড়ি পুকুরে ছাড়ি এবং ইতোমধ্যে সেখান থেকে ৭৬ হাজার রেণু সংগ্রহ করেছি, আরও ৩০-৩৫ হাজার রেণু পাওয়ার আশা করছি। এখন আমি নিশ্চিত—এই পদ্ধতিতে চাষিরা সহজে রেণু উৎপাদন করে নিজেদের ঘেরে চাষ করতে পারবেন। এটা সহজ এবং অধিক লাভজনক।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌকির আহম্মেদ বলেন, ‘সারা দেশে পিএলের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অপ্রতুল। আমরা স্থানীয়ভাবে চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মাটির পুকুরে পিএল উৎপাদনের চেষ্টা করছি এবং প্রাথমিক সাফল্যও পেয়েছি। এই পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে পারলে জাতীয় চাহিদা পূরণ যেমন সম্ভব হবে, তেমনি চাষিরাও লাভবান হবেন।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাষিদের স্বনির্ভর করে তোলার এই প্রকল্প সফল হলে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এই ধরনের উদ্যোগে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশের গলদা পিএলের চাহিদা স্থানীয়ভাবেই পূরণ করা সম্ভব হবে এবং স্বর্নিভর হবে দেশের গলদা চাষিরা।