নেত্রকোনা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে হামলা

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষ ভাঙচুর করেছেন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ১০ জন বিক্রয় প্রতিনিধিকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন ফারুক হোসেন, রাজন মিয়া, কামরুজ্জামান, দীপক কুমার রায়, মুখলেছুজ্জামান, সুদীপ কুমার সরকার, জিল্লুর রহমান, আবদুল হান্নান, সুশান্ত গোস্বামী ও হারুন অর রশিদ। তাঁরা সবাই বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি।
জেলা সিভিল সার্জন ও নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, সকাল সোয়া ১০টার দিকে হাসপাতালে এসে দেখেন বহির্বিভাগে চিকিৎসকের কক্ষে অতিরিক্ত ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের ভিড়ের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় তিনি চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বিক্রয় প্রতিনিধিদের দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু বিক্রয় প্রতিনিধিরা কক্ষ ত্যাগ না করায় তত্ত্বাবধায়ক হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসকের কক্ষ থেকে তাঁদের প্রতিনিধিদের বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের কক্ষ থেকে বের করে দিতে চাইলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিক্রয় প্রতিনিধিরা সংগঠিত হয়ে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালার কাচ ভাঙচুর করেন। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আসা রোগীরা ভয়ে ও আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করেন। এ সময় হাসপাতালের ভর্তি রোগীসহ সেবা নিতে আসা জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে নেত্রকোনা মডেল থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে ১০ বিক্রয় প্রতিনিধিকে আটক করে। নিরাপত্তার ভয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা কাজ ফেলে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে অবস্থান নেন। এতে প্রায় দুই ঘণ্টা হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ফলে দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে আসা রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোস্তাফিজুর রহমান দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধি লেলিন জানান, সপ্তাহে রোববার ও বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ডাক্তার ভিজিটের অনুমতি রয়েছে। সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের সময় এস কে ফার্মার বিক্রয় প্রতিনিধিকে বের করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, সে ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমানকে ঘটনাটি জানাতেই সব বিক্রয় প্রতিনিধি তাঁর কক্ষে গিয়েছিলেন। হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে বিক্রয় প্রতিনিধিরা জড়িত নন।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৩৫ জনের বিরুদ্ধে বিকেলে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মো. মুশফিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।