ফুলবাড়ীয়া কলেজের আন্দোলন স্থগিত

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণের দাবিতে চলমান লাগাতার আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে জেলা সার্কিট হাউসে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এক সমঝোতা বৈঠকের পর শিক্ষক নেতারা ওই ঘোষণা দেন।
বৈঠকে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন, পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণ দাবি আদায় কমিটির আহ্বায়ক এস এম আবুল হাসেম, যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন, সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ১২টায় বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে। বৈঠক শেষে ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণ দাবি আদায় কমিটির আহ্বায়ক এস এম আবুল হাসেম সাংবাদিকদের জানান, শিগগিরই কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে এমপি মোসলেম উদ্দিন ও কলেজ অধ্যক্ষের পদ থেকে নাসির উদ্দিন খান পদত্যাগ করবেন। কলেজ সরকারীকরণে ধর্মমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে এক মাসের জন্য আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে এস এম আবুল হাসেম ছাড়া কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন ও সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন জানান, সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন ও তাঁর ছেলে অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক সেলিম শুরু থেকেই তাঁদের কলেজ সরকারীকরণের বিরোধিতা করেন এবং আন্দোলন দমনে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। এমপি ও তাঁর ছেলের নির্দেশে বিভিন্ন সময় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে এবং তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে পুলিশকে উসকে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বাড়াবাড়ির কারণে পুলিশ মারমুখী হয়ে নির্দয়ভাবে লাঠিপেটা করায় কলেজশিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও পথচারী সফর আলীর মৃত্যু ঘটে।
এ সময় ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, অপ্রীতিকর ঘটনার পরই তিনি সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আজকের বৈঠক সমঝোতার জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক সফল হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
মোসলেম উদ্দিন দাবি করেন, তিনি আগেই আলোচনার প্রস্তাব করেছিলেন কিন্তু কেউ তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসেনি।
ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণের দাবিতে গত রোববার দুপুরে কলেজের ভেতরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় দুজন নিহত হন। এদের মধ্যে একজন ওই কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এবং অন্যজন স্থানীয় মাছ বিক্রেতা সফর আলী। ঘটনার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় আরো অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এই ঘটনার পর ফুলবাড়ীয়া পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল রাতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে হতাহতের ঘটনায় পুলিশের তিনটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ও জেলা প্রশাসকের একটিসহ ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আজ বিকেলে ফুলবাড়ীয়ায় আসেন পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জ গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কমিটিতে আছেন রেঞ্জ অফিসের পুলিশ সুপার সৈয়দ হারুর অর রশীদ, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) এস এ নেওয়াজী। সন্ধ্যায় কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বক্তব্য শুনেন।