ফুলবাড়ীয়ার ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারিকরণের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় দুজন নিহত হওয়ার পর ঘটনার তদন্তে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার একদিন পর আজ সোমবার সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যেগে অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট এ ডি এম আরিফ আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ে। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান জানান, এই তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের উদ্যোগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার-দক্ষিণ (এএসপি)নূরে আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের আলাদা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে রোববার দুপুরে ময়মনসিংহে কলেজ সরকারীকরণের দাবিতে কলেজের ভেতরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় দুজন নিহত হন। এদের মধ্যে একজন ওই কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এবং অন্যজন স্থানীয় মাছবিক্রেতা সফর আলী। ঘটনার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় আরো অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
তবে ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব দাবি করেন, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার একপর্যায়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁরা মারা যেতে পারেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণের দাবিতে দুপুরে পৌর এলাকায় আন্দোলনকারীরা মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে কলেজের ক্যাম্পাসে ঢুকে আন্দোনকারীদের ওপর হামলা করে পুলিশ।
এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন পথচারী মাছবিক্রেতা সফর আলী এবং সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে সফর আলী মারা যান। অন্যদিকে সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান ফুলবাড়ীয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক ঈমাম হোসেন।
কলেজ শিক্ষক আরো জানান, পুলিশের লাঠিপেটায় শিক্ষক হেলাল উদ্দিন, উপেন্দ্র চন্দ্র দাস, মুজিবুল হক, মুজিবুর রহমানসহ শিক্ষার্থীরা আহত হন।
এদিকে ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফুলবাড়ীয়া পৌরসভায় আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন জানায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। এর ফলে সেখানে সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হলো। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লীরা তরফদার বিষয়টি জানিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার পর ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা রিফাত খান রাজিব জানান, এ ঘটনায় নিহত সফর আলীর ভাই বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। তবে আবুল কালাম আজাদের পরিবার কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেয়নি বলেও জানান ওসি।
এদিকে, আজ সকালে ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারীকরণ আন্দোলনের সমন্বয়ক অধ্যাপক আবুল হাশেম জানান, রাতভর শিক্ষকের মরদেহ পুলিশের পাহারায় শহরের সানকিপাড়ার বাসায় রাখা হয়। সকালে পুলিশের পাহারায় মরদেহ নান্দাইল উপজেলার কাজিরপুর গ্রামে নেওয়া হয়েছে। সেখনেই তাঁকে সমাহিত করা হবে। মরদেহ জানাজার জন্য ফুলবাড়ীয়ায় নিতে চাইলেও পুলিশ বাধা দিয়েছে। শুরু থেকেই পুলিশ বলে আসছে ওই দুজন হৃদরোগে আক্রান্ত (হার্ট অ্যাটাক) হয়ে মারা গেছেন।