নওগাঁয় মন্দির দখলের চেষ্টা

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় মন্দির দখলচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার বেলা ১০টার দিকে উপজেলার মৈনম বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গিয়াস উদ্দিন মণ্ডল (৬৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের অভিযোগ, মন্দিরে থাকা লক্ষ্মী প্রতিমা, শিব মূর্তি ও পূজার সরঞ্জামাদি ভাঙচুর অথবা অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
দুপুরে পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশিদুল হক ও মান্দা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রাজ্জাক খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মৈনম বাজার এলাকায় গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া মৈনম সার্বজনীন দুর্গামন্দির। মন্দিরের জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মন্দির ঘরের পেছনের দেয়াল কেটে মন্দির দখলের চেষ্টা করেন গিয়াস উদ্দিন মণ্ডল ও তাঁর ভাড়াটে লোকজন। মন্দিরের ভেতরে থাকা লক্ষ্মী প্রতিমা, শিবমূর্তির পাথর খণ্ড ও পূজার সরঞ্জামাদি সরিয়ে সেখানে চৌকি ও বিছানা সাজিয়ে সেটির দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন। মন্দিরের প্রাচীর ভেঙে সেখানে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়।
আজ সকালে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় ও মন্দির কমিটির লোকজন বিষয়টি জানার পর থানায় খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে গিয়াস উদ্দিনকে আটক করেন এবং মন্দির দখলমুক্ত করেন।
মন্দির কমিটির সভাপতি ব্রজেন্দ্রনাথ কবিরাজ ও সাধারণ সম্পাদক রামরতন মণ্ডল জানান, সকাল ১০টার দিকে মন্দিরে এসে তাঁরা দেখেন মন্দিরের বাইরের দিকে দরজায় একাধিক তালা লাগানো রয়েছে। এতে তাঁদের সন্দেহ হলে মন্দিরের পেছনে গিয়ে মন্দিরের প্রাচীর ভেঙে ফেলার বিষয়টি টের পান। মন্দিরের দরজা ভেঙে ভেতরে থাকা লক্ষ্মী প্রতিমা, শিবমূর্তি ও পূজার সরঞ্জামাদি ভাঙচুর করা হয়েছে অথবা পাশের একটি পুকুরের পানিতে সেগুলো ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করেন তাঁরা।
তাঁরা দাবি করেন, প্রায় শত বছর আগে বিনয় রায় নামের এক ব্যক্তি বিরোধপূর্ণ বর্তমান জায়গাটি মন্দিরের নামে দান করে যান। তখন থেকেই স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরটিতে পূজা করে আসছেন। এখন গিয়াস উদ্দিন জাল দলিল করে মন্দির দখলের চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আবদুল কুদ্দুস মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রায় ৩০-৪০ বছর আগে আমার বাবা হিমু রায় ও মনি রায় নামের দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ৫২ শতাংশ জমি কেনে নেন। পরে ওই জমিতে আমাদের বর্তমান বাড়ি নির্মাণ করা হয়। ১০-১২ বছর আগে বাড়ির সামনে দক্ষিণ দিকে কেনা ছয় শতাংশ জমি দখল করে সেখানে মন্দির ঘর তৈরি করা হয়। আমাদের কেনা জায়গা বুঝে নিয়ে সেখানে বেড়া দিয়েছি।’
প্রতিমা সরিয়ে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘সেখানে কোনো প্রতিমা ছিল না। তাহলে প্রতিমা সরালাম কীভাবে।’
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এএসপি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ঘটনা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্য দোষীদের ধরার জন্য পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, এ ঘটনায় মন্দির কমিটির সভাপতি ব্রজেন্দ্রনাথ কবিরাজ বাদী হয়ে গিয়াস উদ্দিন মণ্ডল ও তাঁর ছেলে আবদুল কুদ্দুসসহ অজ্ঞাত তিন-চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। গিয়াস উদ্দিনকে ঘটনাস্থল থেকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর ছেলেকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।