বছর ঘুরলেও নেত্রকোনার দম্পতি হত্যার জট খুলেনি

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে গত বছর ২৩ অক্টোবর নিহত হন ব্যবসায়ী অরুণ কুমার সাহা (৮২) ও তাঁর স্ত্রী হেনা রাণী (৭২)। বাসায় ঢুকে তাঁদের গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এক বছর পেরিয়ে গেলেও ধরা পড়েনি কোনো আসামি। মামলার কোনো অগ্রগতিও হয়নি।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার দশমীর দিন সকাল থেকে দুপুর আড়াইটার মধ্যে যেকোনো সময়ে উপজেলার মধ্যবাজারের নিজের বাসা সুবর্ণ প্লাজার তিনতলায় দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয় এই দম্পতি। ঘটনার দিন, শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় পাশের বাসায় থাকা নিহত অরুণের ছোট ভাই অজিত কুমার সাহার স্ত্রী সুচিত্রা রানী সাহা ওই দুইজনের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য তৃতীয় তলায় যান। পরে সেখানে গিয়ে অরুণ ও হেনার রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
ঘটনার তিনদিনের মাথায় ২৬ অক্টোবর নিহতদের বড় ছেলে সুজিত সাহা অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে দুর্গাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।
দুর্গাপূজার দশমীর দিনে একই দুজনকে হত্যার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ওই দিন স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদ বিজয়া দশমীর সব আনুষ্ঠানিকতা বর্জন করে উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সব প্রতিমা বিসর্জন দেন।
দুর্গাপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম এই হত্যাকাণ্ডের পর হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেন। পরে আলোচিত হত্যাকাণ্ডের সাথে ওই ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর পর মামলাটির তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি আজও। বর্তমানে মামলাটির তদন্তভার হস্থান্তর করা হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে। সিআইডিতে দুইবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়ে দায়িত্ব পান জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শংকর কুমার দাস।
মামলার অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে (এএসপি) শংকর চন্দ্র দাস বলেন, ‘এখনো এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। প্রায় ১৫ দিন হয় মামলাটির তদন্তভার পেয়েছি। আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনার বিভিন্নদিক মাথায় রেখে তদন্তকাজ চালাচ্ছি। আশা করছি এই হত্যা রহস্যের জট উদঘাটন করতে পারব।’
এ ব্যাপারে মামলার বাদী সুজিত সাহা বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেছে। এখনো আমার মা-বাবার খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। যে ঢিলে-তালে তদন্ত চলছে তাতে মা-বাবার খুনিরা ধরা পড়বে বলে মনে হয় না।’ তিনি দ্রুত খুনিদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানান।
জেলার দুর্গাপুর উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী সাহা বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, হরতাল, অবরোধ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি পালন করেছে। এলাকার সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ রাজনৈতিক দলগুলোও ব্যবসায়ীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রকৃত হত্যাকারী ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও এই আলোচিত হত্যার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
জেলা জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কার্যকরী সভাপতি তপন সাহা ও সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল তালুকদার দম্পতি হত্যায় জড়িতদের এখনো খুঁজে বের না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাঁরা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি।