সুস্থ নেতারা লাশ হয়ে ফিরছেন : বিএনপি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হাসপাতালে ভর্তি না করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে দলটি। দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, গ্রেপ্তারের সময় বিএনপি নেতাদের সুস্থ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অথচ এদের কেউ কেউ কারাগার থেকে লাশ হয়ে ফিরছেন। সুচিকিৎসার অভাবে দলের আরো কয়েকজন নেতার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রিপন এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে কারারুদ্ধ বিএনপি নেতাদের অনেককেই বার বার রিমান্ডে নেওয়ার ফলে ও সু-চিকিৎসার অভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কারাগারে। অনতিবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে গ্রেপ্তারের সময়ে সব নেতাকে সুস্থ অবস্থায়ই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অথচ এদের মধ্যে কেউ কারাগার থেকে লাশ হয়ে ফিরছেন, কেউ হুইল চেয়ারে করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন, অন্যরা রোগ যন্ত্রণায় কারা অভ্যন্তরে কাতর হয়ে পড়ছেন প্রতিদিন।
আমরা জানতে পেরেছি, আজ দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হুইল চেয়ারে বসে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি না করে এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না করে পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করার ঘটনায় আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। কেননা মির্জা আলমগীর হৃদরোগ, ডায়াবেটিকস্ ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লকসহ নানা জটিল রোগে অনেক দিন ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পাঁচ মাসাধিক কারাগারে আটক রয়েছেন। তিনি এর আগে বেশ কয়েকবার বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। মির্জা আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, শমশের মবিন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গাজীপুর সিটি মেয়র প্রফেসর এম এ মান্নান, উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অনেক নেতা-কর্মী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে সুচিকিৎসার অভাবে সংকটাপন্ন হয়ে উঠছেন ক্রমাগত। এ পরিস্থিতি তাঁদের পরিবারে যেমন উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে, একই ভাবে দলও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
আমরা অনতিবিলম্বে দলের অসুস্থ নেতাদের সুচিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তরসহ আটক সব নেতা-কর্মীকে মুক্তিদানের মাধ্যমে সরকারের মানবিক আচরণের প্রত্যাশা করছি।
আমরা বিশ্বাস করি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী দল থাকা অত্যাবশ্যক শর্ত। রাজনীতিতে ভিন্ন মত ও পথ থাকবে এবং তা পরিচালিত হবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুযায়ী।
বিরোধী নেতারা বেঁচে থাকলেই শুধু সরকার তাদের সাথে রাজনৈতিক বিরোধিতায় অবতীর্ণ হতে পারবে। কিন্তু বিরোধীদলের নেতাদের সুচিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে রেখে তাঁদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ায় চরম অমানবিকতার চিত্র ফুটে উঠছে।
দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতির চির অবসান হোক, এটাই দেশের সব মানুষের প্রত্যাশা।’