তামিম-জিয়াকে গ্রেপ্তারে সহায়তায় ২০ লাখ টাকা পুরস্কার

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী ও সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনাকারী এবং অর্থ ও অস্ত্রের জোগানদাতা বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। তিনি জানান, তামিম ও জিয়াকে গ্রেপ্তারে সহায়তা করলে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি এ ঘোষণা দেন।
গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি নামের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় গত ১ জুলাই রাতে জঙ্গিদের হামলার ঘটনায় বিদেশি নাগরিক, পুলিশ কর্মকর্তা, জঙ্গিসহ ২৯ জন নিহত হন। এ হামলার রেশ কাটতে না-কাটতেই ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। এর পর রাজধানীতে আরেকটি বড় হামলার ঘটনা ঘটানোর আগেই কল্যাণপুরে সোয়াটের অভিযানে নিহত হয় নয় জঙ্গি।
আইজিপি জানান, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তারা অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন। মিরপুর এলাকায় জঙ্গি হামলার প্রস্তুতি চলছে এমন তথ্য পেয়েই তারা মিরপুর এলাকায় অভিযান শুরু করেছিল। আর এ অভিযানের কারণেই কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। এ অভিযানের সময় জঙ্গি আস্তানায় অবস্থানকারীদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেটা না করেই উল্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। এরপর যৌথবাহিনী সেখানে সফলভাবে অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি জানান, এসব ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এবং অর্থ ও অস্ত্রের জোগানদাতা তামিম আহমেদ চৌধুরী ও বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক।
তামিম ও জিয়া সম্পর্কে আইজিপি জানান, তামিম ছিল জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) নতুন একটি গ্রুপের সদস্য এবং মেজর জিয়া ছিল আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য। গুলশানে হামলার আগে এই তামিম জঙ্গিদের ব্রিফিং করেছিল।
গুলশান হামলার আগে তামিম চৌধুরী দেশের মধ্যেই ছিল বলে জানান আইজপি। তিনি বলেন, এখন তামিম দেশের বাইরে চলে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা জেএমবির বাংলাদেশের যেকোনো অর্থায়ন বিদেশ থেকেই করা হয়ে থাকে। আর মেজর জিয়াও দেশের বাইরে থাকতে পারে। সেই কারণেই তাদের ধরতে জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা দরকার। তাদের ধরিয়ে দিলে বা দিতে সহযোগিতা করলে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে। আর তথ্যদাতার পরিচয় অবশ্যই গোপন রাখা হবে।
শহীদুল হক বলেন, ‘তামিম চৌধুরী ও বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে গ্রেপ্তার করার জন্য যদি কেউ সহায়তা করে বা আটক করে আমাদের জানায়, তাহলে প্রত্যেকের জন্য ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে।’
তবে তামিম চৌধুরী ও বহিষ্কৃত মেজর জিয়া কোথায় অবস্থান করছে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি আইজিপি।
গুলশান হামলার সময় জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসানাত রেজা করিম আটক, না তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে—জানতে চাইলে ওই বিষয়ে শহীদুল হক সরাসরি কোনো জবাব দেননি।
গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের ঘটনায় জেমএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত থাকলেও হিযবুত তাহরীরের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানান আইজিপি।
পুলিশ জানায়, তামিম আহমেদ চৌধুরীর বাড়ি সিলেটের বিয়ানিবাজার এলাকার দোবাক ইউনিয়েন। তাঁর বাবার নাম শফিক চৌধুরী ও মায়ের নাম খালেদা চৌধুরী। পাসপোর্ট নম্বর- এ এফ-২৮৩৭০৭৬ এবং পুরান পাসপোর্ট নম্বর হচ্ছে- এল-০৬৩৩৪৭৮। সর্বশেষ সংবাদমতে, ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর তামিম দুবাই থেকে ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্সে করে বংলাদেশে প্রবেশ করেন।
অন্যদিকে মেজর জিয়ার পুরো নাম হচ্ছে সৈয়দ মো. জিয়াউল হক। তাঁর বাবার নাম জিল্লুর হক। গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের মস্তফাপুরে। তাঁর পাসপোর্ট নম্বর, এক্স-০৬১৪৯২৩। রাজধানীর বারিধারার ডিএএইচএসে ৯ নম্বর রোডে ৫১২ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকে জিয়ার পরিবার।
পুলিশের ধারণা, নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার কারণেই ২০১২ সালে চাকরি হারান মেজর জিয়া। আর চাকরি হারবার পর থেকে তিনি আনসারুলাহ বাংলাটিমের সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রায় দুই শতাধিক সদস্যদকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন জিয়া।
পুলিশের সদর দপ্তরে আজকের সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জমান মিয়াসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।