সহকর্মীর মাধ্যমে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়ান গুলশানে হামলাকারী শফিকুল

রাজধানীর গুলশানে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজানে হামলাকারীদের একজন শফিকুল ইসলাম। গত বছর ডিসেম্বর মাস পর্যন্তও ছিলেন সাভারের একজন স্কুলশিক্ষক। আজ হত্যাকারী ও সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত তিনি।
সাভারের পুলিশ জানিয়েছে, সহকর্মী আরেক স্কুলশিক্ষকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হন শফিকুল ইসলাম। ওই সহকর্মীর নাম নূর মোহাম্মদ। তিনি মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমির শিক্ষক ছিলেন।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম মোল্লা জানান, আশুলিয়ায় অবস্থানের সময় শফিকুল ইসলাম মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমির শিক্ষক নূর মোহাম্মদের মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে ওই বিদ্যালয়েরই শিক্ষক মিলন হোসাইন ও ইলিয়াস আলীরও ঘনিষ্ঠতা ছিল। এঁদের মধ্যে মিলনকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর নূর মোহাম্মদকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। তবে ইলিয়াস পলাতক।
শফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন আশুলিয়ার ভাদাইলে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। মিলন হোসাইন তাঁকে ওই চাকরি জোগাড় করে দিয়েছিলেন।
মিলন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বেতকিবাড়ি গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে। তিনি সর্বশেষ আশুলিয়া থানা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার পাশে পবনারটেক এলাকায় পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করছিলেন।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে ভাদাইল এলাকা থেকে মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মিলনের স্ত্রী দাবি করেন, গত বুধবার পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়।
মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমির প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, মিলন হোসাইন ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। মিলনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ওই বিদ্যালয়ে যোগ দেন শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল। এর আগে তাঁরা আশুলিয়া থানার জামগড়া এলাকায় ন্যাশনাল ইনিশিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি করতেন। পারিবারিক সমস্যার অজুহাতে শফিকুল গত বছরের ১০ ডিসেম্বর চাকরি ছেড়ে চলে যান। আর ২০১৪ সালের মার্চ মাসে চাকরি ছেড়ে পাশের পবনারটেকে পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার চাকরি নেন মিলন হোসাইন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে ইলিয়াস আলী ও নূর মোহাম্মদ নামের আরো দুই শিক্ষক ছিলেন। এ দুজনের সঙ্গে মিলন ও শফিকুলের ঘনিষ্ঠতা ছিল। গত বছর ডিসেম্বর মাসে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ নূর মোহাম্মদকে আটক করে। এর আগেই ইলিয়াস চাকরি ছেড়ে গা ঢাকা দেন।
এদিকে মিলনের স্ত্রী জহুরা বেগমের দাবি, জঙ্গি তৎপরতায় তাঁর স্বামীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। চাকরির সুবাদে শফিকুলসহ অন্যদের সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্ক ছিল। এর অর্থ এই নয় যে তিনি জঙ্গি।
তবে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, মিলন হোসাইনের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জঙ্গি শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা থাকার কথাও স্বীকার করেছেন।
আশুলিয়া থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আশুলিয়া এলাকায় কয়েকশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলের বেশ কটিতে জামায়াত ও জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ওই স্কুলগুলোকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।